কেবল আশ্বাসেই ঝুলে থাকল তিস্তা চুক্তি

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:২১; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০০:১৯

ছবি: সংগৃহিত

তিস্তা চুক্তির কেবল আশ্বাসেই খুশি হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তিস্তা ইস্যু অধরাই রয়ে গেল।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি ভাগাভাগি কিংবা ভারত থেকে বাংলাদেশের জ্বালানি তেল কেনার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও তিস্তা কিংবা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মতো ইস্যুতে জটিলতা রয়েই গেল। খবর বিবিসির।

দিল্লিতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে "ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন ও বাণিজ্য সহযোগী" বলে বর্ণনা করেছেন, শেখ হাসিনাও জানিয়েছেন, এই দুই বন্ধু দেশ যে কোনও অমীমাংসিত বিষয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মেটাতে সক্ষম।

বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও যে এই দুই নেতার মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে ভারত তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছে।

শেখ হাসিনার সফরের মূল কার্যদিবস ছিল মঙ্গলবারেই, তাহলে সেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার কী পরিণতি হল?

বস্তুত দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিনিধিদলের মধ্যে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হল, তাতে খুব বড় চমক যে কিছু থাকবে না - তা মোটামুটি জানাই ছিল।

প্রত্যাশিতভাবেই সাতটি 'এমওইউ' বা সমঝোতাপত্র সেখানে স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল কুশিয়ারা নদীর রহিমপুর পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশকে ১৫৩ কিউসেক জল প্রত্যাহার করতে দিতে ভারতের রাজি হওয়া।

উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের গঙ্গা চুক্তির পর এই প্রথম ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগিতে রাজি হল, বিষয়টিকে এভাবেও বর্ণনা করছে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার স্বাগত ভাষণে জোর দিয়েছেন দু'দেশের বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার ওপর।

মি. মোদী বলেন, "শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ দেখার মতো উন্নতি করেছে - আর তারা এখন ভারতের সবচেয়ে বড় ডেভেলপমেন্ট পার্টনারও বটে।"

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গেই যে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, সেটাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

তেল, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা


বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে এনার্জি বা বিদ্যুৎ সঙ্কট চলছে, তার পটভূমিতে দু'দেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত রামপাল মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর আসন্ন কমিশনিং খুব ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে - আর আজ মঙ্গলবার দুই প্রধানমন্ত্রীর সামনেই বাজিয়ে শোনানো হয় সেই রামপাল প্রকল্পের লঞ্চিং প্রোমো।

গত মাসেই এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়টি বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে সিনক্রোনাইজ করা হয়েছে, এবং ভারত এটিকে দু'দেশের জ্বালানি সহযোগিতার ক্ষেত্রে খুব বড় পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছে।

ভারত থেকে বাংলাদেশ যাতে সরাসরি পরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনতে পারে, তা নিয়েও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কাটরা বিকেলে তার ব্রিফিংয়ে জানান, "বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ নিয়মিতই কথাবার্তা বলে থাকে। আর তার মধ্যে তেলও আছে।"

"এখন ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডকে বাংলাদেশ একটি জি-টু-জি সাপ্লায়ার, অর্থাৎ এক সরকার থেকে আরেক সরকারের কাছে সরবরাহকারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, ফলে বাংলাদেশে তেল বিক্রির প্রস্তাব সক্রিয় বিবেচনায় আছে।"

কর্মকর্তারা এখন এই জ্বালানি তেল বিক্রির শর্তাবলী নিয়ে কথাবার্তা বলছেন বলেও মি. কাটরা জানান।

শ্রীলঙ্কা এফেক্ট, চীনের প্রভাব


দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হলেও বাংলাদেশের আর্থিক সঙ্কট নিয়ে নির্দিষ্ট করে কোনও কথাবার্তা হয়নি বলেও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব দাবি করেছেন।

তবে বাংলাদেশে ভারতের উন্নয়ন সহায়তা অব্যাহত থাকবে, নরেন্দ্র মোদী সেই আশ্বাস শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে ভারত অবশ্য নতুন কোনও আশার কথা শোনাতে পারেনি। তাদের মিয়ানমারে ফেরানোর চেষ্টায় ভারতের ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত থাকবে, এটুকু বলেই পররাষ্ট্রসচিব বক্তব্য শেষ করেছেন।

তবে চীন যে দুই নেতার আলোচনায় প্রবলভাবেই ছিল, তা তিনি কার্যত মেনে নিয়েছেন।

মি. কাটরা বলেন, "বাংলাদেশে চীনের উপস্থিতি প্রসঙ্গে এটুকুই বলব যে দুই নেতা যে সব বিষয়ে কথা বলেছেন তার মধ্যে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষাগত সুরক্ষার মতো সব বিষয়ই ছিল। তবে এই বিষয়গুলো কিন্তু দ্বিপাক্ষিক দিক থেকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ।"

তবুও আশাবাদী হাসিনা


হায়দ্রাবাদ হাউসে শেখ হাসিনা তার ভাষণের একটা অংশ দিয়েছেন বাংলায়, এবং সেখানে ভারতের প্রতি তার ও তার পরিবারের ঐতিহাসিক কৃতজ্ঞতাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, "প্রতিবেশী দেশের সাথে সমস্যা থাকতেই পারে, কিন্তু সেটা যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায় সেটা কিন্তু আমরা দুই দেশ বারবার দেখিয়ে দিয়েছি।"

ফলে তিস্তার মতো যে সব ইস্যু এবারেও নিষ্পত্তি হল না, আগামীতে সেগুলোরও সমাধানের সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল।

আর একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন তারা, 'সেপা' নামে যে সর্বাত্মক বাণিজ্য চুক্তিটি নিয়ে দু'দেশের মধ্যে বহুদিন ধরে আলাপ-আলোচনা চরছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের ফাইনাল গ্র্যাজুয়েশন বা স্থায়ীভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই তা সম্পাদন করা হবে বলে দুই দেশ একমত হয়েছে।

মূল খবরের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top