সরকারি ঋণ ঠেকল ২৩ হাজার কোটি টাকায়

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২ ২০:১২; আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১০:১১

ফাইল ছবি

সরকারের আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীন অবস্থার প্রভাব পড়ছে ঋণ ব্যবস্থায়ও। ক্রমান্বয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করায় সরকারের ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকায়। খবর যুগান্তরের।

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতে তারল্যের ওপর চাপ কমাতে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নতুন কোনো ঋণ নিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে। চলতি অর্থবছরের গত অক্টোবর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। এ ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় ঋণের ওপর নির্ভর করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাড়তি ঋণের কারণে মূল্যস্ফীতির হার আরও উসকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকাকে হাইপাওয়ার্ড মানি বা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অর্থ বলা হয়। এই টাকা বাজারে দ্বিগুণ থেকে আড়াই অর্থের সৃষ্টি করে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ বের হলে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায় দ্বিগুণের বেশি। এতে একদিকে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাজারে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের কারণে ও দেশীয় পিরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের শুরুতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের ঘোষণা দিয়েছে। এর আওতায় বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে তিন দফা নীতি নির্ধারণী সুদের হার বাড়িয়েছে। তারপরও সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বেড়েছে। এর মধ্যে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাগামহীনভাবে ঋণ নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণের কারণে মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। গত জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ শতাংশের ওপরে। আগস্টে তা বেড়ে সাড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। সেপ্টেম্বরেও এ হার ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। অক্টোবরে তা কিছুটা কমে ৯ শতাংশের নিচে নেমেছে। তবে মূল্যস্ফীতির এ হিসাব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যখন বাজারে পণ্যমূল্য আরও বেড়েছে ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। তখন মূল্যস্ফীতির হার কীভাবে কমল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই চার মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন কোনো ঋণ নেয়নি। উলটো ওই সময়ে আগে নেওয়া ঋণের মধ্যে ৯৯৯৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের পর গত জুলাই অক্টোবরে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩২৩ কোটি টাকায়। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১০ হাজার ১৩ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরেই ঋণ নিয়েছে ৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার নতুন কোনো ঋণ নেয়নি। বরং আলোচ্য সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা ঋণ পরিশাধ করেছে। সরকার কেবল সেপ্টেম্বরেই ঋণ নিয়েছিল ২২ হাজার ২২৩ কোটি টাাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকার নন-ব্যাংকিং খাত থেকে অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে গত জুলাই সেপ্টেম্বরে ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৪ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। এ খাতে সরকারের ঋণ কমে গেছে। পণ্যমূল্য বাড়ায় ভোক্তারা এখন বাজারের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এ কারণে সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে পরিশোধ করা হয়েছে বেশি অর্থ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি ইচ্ছে করেই সরকার কমিয়েছে।

এদিকে ব্যাংকে আমানত প্রবাহও কমে গেছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের যে ব্যয় হচ্ছে সে তুলনায় রাজস্ব আয় হচ্ছে না। ফলে বাড়তি ব্যয়ের চাহিদা মেটাতে ঋণ করতে হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নানা সংকটে পড়ে তারল্য ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনা বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া আমানত কমায় তারল্যের ওপর চাপ বেড়েছে। সরকারের রাজস্ব আয় গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বেড়েছিল ১৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারকে বাড়তি দামে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় অন্যান্য খাতেও বাড়তি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে।

যুগান্তরের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top