বিদ্যুৎ এর দাম বাড়লে, বাড়বে গ্রাহকদের দুর্দশাও

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২২ ২০:২৪; আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২২ ২১:৩৭

ফাইল ছবি

বাসা-বাড়ি, শিল্প-কারখানা সর্বত্র অন্যতম মৌলিক প্রয়োজনীয় হল বিদ্যুৎ। জ্বালানি সংকটে টাল-মাটাল পরিস্থিতি দেশের শিল্প-কারখানায়। এমন অবস্থায়  গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ানো হলে গ্রাহকদের দুর্দশা আরো বাড়বে। খবর যুগান্তরের।

গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে, আগামী ৬ মাস ভর্তুকি দিয়ে হলেও গ্রাহক পর্যায়ে দাম অপরিবর্তিত রাখা উচিত। সোমবার পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেছেন।

বাংলাদেশ নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, এই সংকটময় মুহূর্তে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। তারপরও যখন বাড়ানো হয়েছে, তখন গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম যাতে না বাড়ানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। চলমান বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে শিল্পে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হবে না। প্রয়োজনে আগামী ৬ মাস ভর্তুকি দিয়ে হলেও আগের অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বহাল রাখতে হবে। তা না হলে শিল্প কঠিন সংকটে পড়বে। তিনি আরও বলেন, অর্ডার না থাকায় এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক শিল্প মালিক বর্তমান রেটেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছে না। অনেকের বিল বকেয়া হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ লাইন সচল রাখতে নানা পর্যায়ে দেনদরবার করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বিল বাড়ানো হলে অনেক ছোট শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, এখন কঠিন সময় পার করছে বিশ্ব। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে পোশাক খাতসহ স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ব্যাহত হবে। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, জ্বালানি খাত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা উচিত। প্রতিবছর কী পরিমাণ দাম বাড়ানো হবে সেটা আগে থেকে জানানো হলে উদ্যোক্তারা সে হিসাবে বিনিয়োগ করবেন। সর্বোপরি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর হলে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লে এটি খুচরা পর্যায়ে বাড়বেই। পাইকারি পর্যায়ে বাড়লে কোম্পানিগুলো খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করবে সরকারের কাছে এটিই স্বাভাবিক। এরপর গণশুনানি হবে। কিন্তু এখন সরকার খুচরা পর্যায়ে ভর্তুকি দিলে তাহলে দাম বাড়বে না। ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোর অপচয়, দুর্নীতি হ্রাস করতে পারলে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হবে না। তবে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এলে ক্যাব এ ব্যাপারেও প্রকৃত হিসাব তুলে ধরবে সংশ্লিষ্টদের কাছে। যাতে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার এবং ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি করতে না হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আইএমএফও বলেছে, ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে। এই ভর্তুকি কাদের দেওয়া হচ্ছে, কেন দেওয়া হচ্ছে এবং সেটা না দেওয়ার পথ কী এগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয় না। বিদ্যুৎ খাতের বড় ভর্তুকি যাচ্ছে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কারণে। যে কেন্দ্রগুলোর সময় বাড়ানোর দরকার ছিল না, যেগুলো উৎপাদন করেনি, তাদেরও টাকা দিতে হয়েছে। ১১ বছরে এজন্য দিতে হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, গত কিছুদিন ধরে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো মুনাফা করছে। আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি না, কিন্তু তাদের মুনাফা হচ্ছে। কারণ জনগণের টাকা থেকে তাদের দেওয়া হচ্ছে।

বিইআরসির গণশুনানি প্রহসন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণশুনানিটা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিটা ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গণশুনানিতে যেসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয় এবং তার পর যে লজিক্যাল কনক্লিউশন আসে, সেগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো সম্পর্ক থাকে না। কারণ সরকার সিদ্ধান্তটা আগে নেয়। তারপর সেটাকে রেশনালাইজ (যৌক্তিক করে তোলা) করার চেষ্টা করে। রেশনালাইজ যখন করতে পারে না, তখনো সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকে। তার মানে এই গণশুনানির কোনো মানে নেই। এটা একটা নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়।

যুগান্তরের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top