শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বানচাল করতে সরকারি এজেন্সিগুলো নাশকতা চালাচ্ছে

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:০৯; আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৪০

ফাইল ছবি

 

দেশের শান্তিপূর্ন পরিস্থিতির অবনতি করতে সরকারের এজেন্সিগুলো নাশকতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বানচাল করতেই এমন প্রচেষ্টা বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। খবর মানবজমিনের।

১০ই ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ। সমাবেশকে সামনে রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সরকারের এজেন্সিগুলো নাশকতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, সরকারি চক্রান্ত থেমে নেই। নয়াপল্টন এলাকাকে অস্থিতিশীল করতে, নানা ধরনের নাশকতা ঘটাতে মরিয়া সরকারের এজেন্সি। সরকারদলীয় লোকজন ককটেল ফুটিয়ে অন্যদের নাম দিচ্ছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে তারা। পুলিশ আকস্মিকভাবে নেতাকর্মীদেরকে পাইকারি হারে গ্রেপ্তার করছে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার অহেতুক সর্বনাশা প্রতিরোধে মেতে উঠেছে। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে অযথা কথাবার্তা বলে মন্ত্রীরা উস্কানি দিয়ে বলেছেন খেলা হবে। ‘খেলা হবে’ এটা রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে অশান্তি সৃষ্টি করা হলেও ইতিমধ্যে বিএনপি ৯টি বিভাগীয় গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছে।

আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ। আগের বিভাগীয় সমাবেশে নানাভাবে হামলা চালিয়েও সরকার থেমে যায়নি।
সর্বশেষ আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ বানচাল করার জন্য অবৈধ সরকার যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতাদের কথাবার্তায় ভারসাম্যহীনতার প্রভাব সুস্পষ্ট। ইতিমধ্যেই জনগণের নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার একটি নাশকতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। কিন্তু সরকারের এতে কোনো লাভ হবে না। জনগণ দিবালোকের মতোই সবকিছু বুঝতে পারছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১০ই ডিসেম্বর গণসমাবেশকে বানচাল করার জন্য খালেদা জিয়ার বাসার সামনে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে চরমভাবে তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বিএনপি’র চেয়ারপারসনকে মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার বাসার সামনে থেকে এই ব্যারিকেড তুলে নেয়ার দাবি করেন দলের মহাসচিব।

রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রান্তিক কর্মসূচিতে সরকার বাধা সৃষ্টি করেছে- এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সব দিক দিয়ে তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। পরিবহন ধর্মঘট দিয়েছে। পুলিশকে ব্যবহার করেছে। অসংখ্য গায়েবি মামলা দিয়েছে। রাজশাহীর গণসমাবেশ থেকে ফেরার পথে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও নুরুল ইসলাম নয়নকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই আটক করা হয়েছে। শুধু এই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য, নেতাকর্মীদের দমন করার জন্য এটা করা হয়েছে। পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না। অথচ পরোয়ানা ছাড়া তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার গাড়ি ও চালকের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত ৩০শে নভেম্বর থেকে ৪ঠা ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ঢাকায় ১০৩১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে মতিঝিলে পরিত্যক্ত বিআরটিসি বাসে আগুন দিয়ে বিএনপি’র ওপর দায় চাপাতে গিয়ে চুপসে গেছেন ওবায়দুল কাদের। অথচ বিএনপিকে দায়ী করে নাশকতার কথা বলে যাচ্ছেন তিনি। জঙ্গি ধরার নামে মেস ও বাসাবাড়িতে পুলিশ রেইড ব্লক দিচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল আরও বলেন, পুলিশের এই হানা মূলত বিএনপি’র নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তার, হয়রানি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য। ২০১৩ ও ২০১৫ সালের পুরনো নাটকের পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। সরকার মেস ও আবাসিক হোটেলে জঙ্গিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। একদিকে জঙ্গি নাটক, অন্যদিকে অগ্নিসন্ত্রাসের নাটক। এখন আবার একই বুলি আওড়াতে শুরু করেছেন। ঢাকার গণসমাবেশে সরকার অগ্নিসন্ত্রাস তৈরি না করলে তো ভয় নেই। ঢাকায় শান্তি সমাবেশ হবে। নাশকতা করলে সরকার করবে। দায় তাদের বহন করতে হবে। সরকার সুদূরপ্রসারী অশুভ মাস্টারপ্ল্যানের দিকে হাঁটছে বলেও অভিযোগ মির্জা ফখরুলের।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরের নেতারা বাসায় থাকতে পারছেন না। বিএনপি নেতাকর্মীদের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে সরকার। ঢাকার সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অযথা এটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না। এমনটা করলে দায় আপনাদের নিতে হবে। এখন আর ভয়ডর নাই। কী করবেন করেন। আমরা সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করবো। কখনো নাশকতা করি নাই, অশান্তি করি নাই, বিশৃঙ্খলা করি নাই।

এদিকে এক প্রশ্নের উত্তরে আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তুরাগ নদের তীর ব্যতীত রাজধানীতে বিকল্প প্রস্তাব দিলে সেটা বিবেচনা করবে বিএনপি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, যেকোনো স্থানে সমাবেশ করবো- এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার, এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। সেখানে আগ বাড়িয়ে নাশকতা হবে বলে আমার সাংবিধানিক অধিকারকে আপনারা লঙ্ঘন করছেন, কেড়ে নিচ্ছেন। আমরা ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করবো সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করছেন। দয়া করে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করবেন না। আমরা যে নয়টি সমাবেশ সম্পূর্ণ করেছি ঠিক একইভাবে ঢাকার সমাবেশ সম্পূর্ণ করবো। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, আমিনুল হক, আবদুল বারী ড্যানী, আমিরুজ্জামান শিমুল, আ ক ম মোজাম্মেল, আমিনুল ইসলাম, ওমর ফারুক শাফিন, এস এম জাহাঙ্গীর, হায়দার আলী লেলিন, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের সালাহউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ।

ভেন্যু নিয়ে ফের ডিএমপিতে বিএনপি: আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশ। যদিও এখনো সমাবেশস্থল নির্ধারণ নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেননি বিএনপি’র নেতারা। অন্যদিকে পুলিশও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া অন্য কোথাও বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিতে চায় না। এ অবস্থায় সমাবেশের স্থান নির্ধারণে ফের পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করতে রোববার বিকালে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে যান বিএনপি’র একটি প্রতিনিধিদল। ডিএমপি’র সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি নয়াপল্টনে সমাবেশ করবো। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে চিঠি দিয়েছে। সোমবার এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

মানবজমিনের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top