কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন উৎপাদন বেড়েছে ৪ শতাংশ

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ ১৭:২৫; আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৪৩

ছবি: বণিক বার্তার

মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে আমনের আবাদ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমন ধানের জমি। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। খবর বণিক বার্তার। 

তবে সে শঙ্কা পেছনে ফেলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৪ শতাংশ বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলনও হয়েছে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি। শতভাগ কর্তন শেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) প্রকাশিত আমন ধান উৎপাদনের প্রাথমিক তথ্যে এ পরিসংখ্যান উঠে আসে।

ডিএই সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বোনা ও রোপা আমন মিলিয়ে মোট ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টন। তবে এসব জমিতে এবার চাল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ২৯ হাজার টন। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছে ২ দশমিক ৮৮ টন, যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৭৬ টন।

এবার রোপা আমনে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৬৭ লাখ ২৩ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। আর বোনা আমনের ২ লাখ ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত চালের পরিমাণ ৩ লাখ ৬ হাজার টন। যদিও বোনা আমনে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টন। রোপা আমনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ উৎপাদন বেশি হলেও বোনা আমনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ১৭ শতাংশ কম উৎপাদন হয়েছে।

এ মৌসুমে হাইব্রিড ধান আবাদ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি চালের গড় ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ৮৪ টন। উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে, যার চালের গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক শূন্য ৬ টন। এছাড়া স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৬ লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে। এ ধানের গড় ফলন ১ দশমিক ৭২ টন।

চলতি আমন মৌসুমে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয়। রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলা রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪ লাখ ৪ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে এ বছর ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬১৫ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। গড় ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি ৩ দশমিক ৩৭ টন। বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ—এ চার জেলায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ১২ লাখ ২৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। সে হিসেবে গড় ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ২০ টন।

দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার মোট ৪ লাখ ৯৮ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৭২৮ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। এ অঞ্চলে গড় ফলন ৩ দশমিক ২৬ টন। যশোর অঞ্চলের ছয় জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৩ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। সে হিসেবে এ অঞ্চলে হেক্টরপ্রতি জমিতে গড় ফলন ৩ দশমিক ৩৪ টন।

এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলে হেক্টরপ্রতি ৩ দশমিক শূন্য ৫ টন, রংপুর অঞ্চলে ৩ দশমিক শূন্য ২, ঢাকা অঞ্চলে ২ দশমিক ৯৮, কুমিল্লা অঞ্চলে ২ দশমিক ৯৪, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ২ দশমিক ৮৭, রাঙ্গামাটি অঞ্চলে ২ দশমিক ৮৪, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২ দশমিক ৮৪, খুলনা অঞ্চলে ২ দশমিক ৭৮, সিলেট অঞ্চলে ২ দশমিক ৬৯ ও বরিশাল অঞ্চলে প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৪১ টন চাল উৎপাদন হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর আমন মৌসুমে ১ কোটি ৬৩ লাখ টন চাল উৎপাদন হবে। গড় ফলনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল ২ দশমিক ৭৬ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে ব্রির পূর্বাভাসের চেয়ে চালের উৎপাদন প্রায় সাত লাখ টন বেশি হয়েছে।

কৃষি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমনের ভালো ফলনের জন্য পরিষ্কার সূর্যালোক, অধিক সৌর বিকিরণ, অধিক গড় তাপমাত্রা, কম আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং মেঘমুক্ত আকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবার আমন মৌসুমে মোট সূর্যালোক ছাড়াও সৌর বিকিরণ ও গড় তাপমাত্রা বেশি ছিল। এছাড়া আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম এবং মেঘমুক্ত আকাশ ফলন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

স্থানীয়ভাবে চলতি আমন মৌসুমে রেকর্ড ফলনের দাবি করা হলেও বাজারে কমছে না চালের দাম। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে মোটা চাল ৫২ টাকা, মাঝারি চাল ৫৮ টাকা এবং সরু চাল ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। চালের মজুদ বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানিতেও জোর প্রচেষ্টা চলছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্রপস উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার আমনের ফলন ভালো হয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে মৌসুমের শুরুতে আমন উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া ভালো থাকায় রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া এ বছর বন্যা বা গুরুতর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগও ছিল না।’

আমন মৌসুমের শুরুতে বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতি থাকলেও ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিসের কারণে ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘শুরুতে যখন অনাবৃষ্টি ছিল তখন সেচ ও সার সুবিধা দেয়া হয়েছে। আমনের ক্ষেত্রে দিনের দৈর্ঘ্য যত বড় হবে ফলন তত ভালো হবে। সে হিসেবে এবার ভালো সূর্যালোকের ইতিবাচক প্রভাব ফলনে দেখা গেছে। এ কারণে দুর্যোগের পরও ফলন ভালো হয়েছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top