রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন জন্ম নেয় ৯৫ শিশু

রাজটাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:২১; আপডেট: ১৩ মে ২০২৫ ০০:০৩

ছবি: সংগৃহিত

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোয় প্রতিদিন গড়ে ৯৫টি শিশু জন্ম নিচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এক প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, জন্মহারের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২-১৩ লাখে পৌঁছতে পারে। গতকাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টের শেষদিন পর্যন্ত দেশে ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক বসবাস করছিল। অবশ্য গত বছরই রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।

গতকাল সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জমা দেয়া প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলো এইচআইভি বা এইডস, হেপাটাইটিস সি, ডিপথেরিয়া ইত্যাদির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে ৭১০ জন এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬১২ জনই রোহিঙ্গা। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১ জন রোহিঙ্গা নাগরিক এইচআইভি সংক্রমণে মারা গেছে। বর্তমানে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নারী কক্সবাজারে বিভিন্ন হোটেলে যৌন ব্যবসায় সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা ও আগুনের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ও মো. নাসির উদ্দিন অংশ নেন।

বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, জিরো লাইনে অবস্থিত তমব্রু কোনাপাড়া ক্যাম্পটিতে নিয়মিত টহল ও নজরদারি জোরদার করতে না পারার কারণে এলাকাটি রাখাইনের সশন্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সাংগঠনিক কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় বর্তমানে ১১টি দুর্বৃত্ত সংগঠন সক্রিয় বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে আরসা সক্রিয় রয়েছে উখিয়া, বালুখালী, পালংখালী, হোয়াইক্যংয়ে, আরএসও এবং মাস্টার মুন্নার দল উখিয়া ও পালংখালীতে সক্রিয়। এছাড়া ইসলামী মাহাজ ও জাবু ডাকাত দল হোয়াইক্যংয়ে, নয়াপাড়া ক্যাম্পে চাকমা ডাকাত দল, নবী হোসেন ডাকাত দল, পুতিয়া ডাকাত দল, সালমান শাহ ডাকাত দল ও খালেক ডাকাত দল সক্রিয় বলে উল্লেখ করা হয়।

বেশির ভাগ ক্যাম্পের ওপর আরসার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরসা ও নবী হোসেন ডাকাত দল প্রায়ই মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এদের মধ্যে হত্যার ঘটনাও ঘটে। আরসার উপস্থিতি ও তাদের সন্দেহভাজন কার্যক্রম দেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে ২০২১ ও ২০২২ সালে সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখা যায়, মোট অপরাধ কিছু কমলেও এ সময়ে বেড়েছে হত্যাকাণ্ড। ২০২১ সালে ২২টি হত্যার ঘটনা ঘটলেও ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৩২টি। এছাড়া চুরি-ডাকাতির সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় ৭৭ থেকে কমে ২০২২ সালে ৭৫টি হয়েছে, গোলাগুলির ঘটনা ৫১ থেকে ১৮, অপহরণের ঘটনা ১৭৩ থেকে ৮৬, অন্তঃকোন্দলের সংখ্যা ১১ থেকে একটি, মাদকের ঘটনা ২৬৮ থেকে ২৪৯ এবং অন্যান্য অপরাধ ৫৬৭ থেকে কমে ৫৫৩টি হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারি ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ২২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৯৯টি দুর্ঘটনাজনিত, ৬০টি নাশকতামূলক ও ৬৩টির কারণ জানা যায়নি।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top