দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ, দাম কমার লক্ষণ নেই

রাজটাইমস ডেক্স | প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৩৫; আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ১৮:১০

ফাইল ছবি

হুহু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। দিশে হারা মানুষ। বিশেষ করে মধ্যেবিত্ত-নিম্নবিত্তরা পড়েছে চরম বিপাকে। এদিকে দাম কমার কোন লক্ষণ নেই দেশে।বাজারে গত জুলাই থেকে চড়া সবজির দাম। দুই সপ্তাহে দর আরও বেড়েছে। যেসব সবজি আগে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ছিল, সেটা এখন ৬০ থেকে ১০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির দাম কমতে আরও এক মাস লাগবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকেরা নতুন সবজি আবাদ শুরু করেছেন। ওই সবজি এলেই কেবল দাম কমতে পারে।
সবজির মতো চাল, পেঁয়াজ ও আলুর দাম নির্ভর করছে নতুন মৌসুম ও সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর। আর ভোজ্যতেলের দাম কমতে পারে কেবল বিশ্ববাজারে দর পড়তে শুরু করলে। ফলে শিগগিরই মানুষের দুর্ভোগ কমছে না।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দাম বেঁধে দেওয়া ও জরিমানার কৌশল তেমন একটা কাজ করছে না। যেমন গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে ব্যাপক অভিযান চালায়। ব্যবসায়ীদের বিপুল জরিমানা করা হয়। কিন্তু প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এখনো ৯০ থেকে ১০০ টাকায় রয়ে গেছে।


দেশে নতুন মৌসুমের আগাম পেঁয়াজ উঠবে আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরুতে। এর আগে আমদানি বাড়লেই কেবল দাম কমতে পারে। চট্টগ্রামের পেঁয়াজ আমদানিকারক ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর বিকল্প দেশ থেকে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পেঁয়াজ আসবে এ মাসের শেষ থেকে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ৭ অক্টোবর আলুর দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বেঁধে দিয়ে তা কার্যকরের জন্য জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠায়। বাজারে নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। আর কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানে আলু বিক্রি হয় ৪২ থেকে ৪৩ টাকা কেজিতে। ফলে পাইকারি বাজারে দাম তিন টাকার মতো কমেছে বলে দেখা যায়। অথচ পাইকারির জন্য নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ২৫ টাকা।


আলু নির্ধারিত দামে বিক্রি শুরু করতে হিমাগারগুলোতে তদারকি শুরু করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানায়, গতকাল তাদের ৩৯টি দল ৭৯টি বাজারে অভিযান চালিয়ে ৯৬টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। এর পরিমাণ মোট সাড়ে ছয় লাখ টাকা। রাজশাহীর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ পবা উপজেলার দুটি হিমাগার পরিদর্শনে যান। সেখানে তাঁকে ব্যবসায়ীরা ঘিরে ধরেন। তাঁরা দাবি করেন, কয়েক বছর লোকসান দেওয়ার পর এবারই তাঁরা ভালো দাম পাচ্ছেন। অবশ্য হাসান আল মারুফ বলেন, নির্ধারিত দামে না বিক্রি করলে জরিমানা করা হবে।
উল্লেখ্য, দেশে ডিসেম্বরে নতুন আলু উঠতে শুরু করবে। তবে সরবরাহ বাড়তে লাগবে জানুয়ারি পর্যন্ত।


খাদ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে গত ২৯ সেপ্টেম্বর মিলগেটে সরু ও মাঝারি চালের দাম নির্ধারণ করে দেয়। ঢাকার খুচরা বাজারে অবশ্য দাম কমেনি। প্রতি কেজি ভালো মানের মোটা চালের দাম ৪৮-৫০ টাকা, মাঝারি চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা এবং সরু চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর আমন মৌসুমে ৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। তা অর্জিত হয়েছে। নভেম্বরের শেষ দিকে নতুন মৌসুমের চাল বাজারে আসতে শুরু করতে পারে। অবশ্য দাম কমা নির্ভর করছে আমনের ফলনের ওপর।
বাজারে শীতের আগাম সবজি কিছু কিছু উঠতে শুরু করেছে। তবে দাম অস্বাভাবিক বেশি। ব্যবসায়ীরা শিমের কেজি ১৬০ টাকা চাচ্ছেন। একেবারেই ছোট আকারের একেকটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা, যার তিনটি কিনলে এক বেলার এক পদ তরকারি রান্না করা সম্ভব।


এ দিকে ইলিশ ধরা বন্ধ হওয়ার পর বাজারে মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। ঢাকার শেওড়াপাড়া বাজারে গতকাল চাষের কই ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পাঙাশ ১৫০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৬০-১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা যায়। দুই কেজি আকারের রুই মাছের কেজি চাওয়া হয় ৩৫০ টাকা। চিংড়ি, বেলে, বোয়াল, চিতল, আইড়, বাইন ইত্যাদি মাছের প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। সবজি রান্নার ছোট চিংড়িও ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন বিক্রেতারা।
শেওড়াপাড়া বাজারের মাছ বিক্রেতা নূর আলম বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধের পর বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। তিনি অবশ্য একটি ভালো খবর দেন। বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। ফলে কিছুদিন পর থেকে মাছ ধরা পড়ার হার বাড়বে। এতে দেশি মাছের দাম কমতে পারে।

সূত্র: প্রথম আলো/ এমএস ইসলাম

 



বিষয়: বাজারদর


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top