জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী আজ

রাজটাইমস ডেক্স | প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২১ ১৪:৩৯; আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ১৪:৪১

জিয়াউর রহমান - ছবি : সংগৃহীত

আজ ৩০ মে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অতুলনীয় ভূমিকার কারণে ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছেন শহীদ জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে তার আহ্বান জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস জুগিয়েছে। একইসাথে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য হানাদারদের বিরুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে জিয়াউর রহমান ‘শহীদ জিয়া’ হিসেবেই পরিচিত। শোকাবহ এই দিনটির স্মরণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মিলাদ মাহফিল, ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ ১৫ দিনের কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। জাতি আজ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

জিয়াউর রহমান ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তিনিই জাতির সঙ্কটময় মুহূর্তে বারবার দাঁড়িয়েছেন নির্ভয়ে, মাথা উঁচু করে। বিপর্যস্ত জাতিকে রক্ষা করেছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত এক পরিস্থিতি থেকে দেশ মুক্তি পায় ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে। আর এই বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। নিশ্চিত করেন বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের বক্তা জিয়াউর রহমান জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তার অন্যতম উপহার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকাবাহী রাজনৈতিক দল ‘বিএনপি’। তার শাহাদতের পর সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া দলের হাল ধরেন। তার প্রতিষ্ঠিত দল তিনবার জনগণের ভোটে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায়।


প্রেসিডেন্ট জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্পোন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের ভিত রচনা করেন। জাতীয় মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠাসহ নারীসমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃত। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদ্দীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে এক মর্যাদাবান রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। সিপাহি-জনতার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় এসে স্বল্পসময়ের শাসনকালে তিনি বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছিলেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের আকস্মিক শাহাদতবরণে গোটা জাতি শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এই শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে তার নামাজে জানাজায়। লাখো মানুষের উপস্থিতি সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। শিরোনাম ছিল- একটি লাশের পাশে বাংলাদেশ।


জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতা-পরবর্তীতে তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তার ডাক নাম ছিল ‘কমল’। বাবা মনসুরুর রহমান ও মা জাহানারা খাতুনের দ্বিতীয় ছেলে কমল ছোটবেলা থেকেই লাজুক ও গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে কলকাতায় তার বাল্যপাঠ শুরু হয় সেখানকার হেয়ার স্কুলে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে বাবার সাথে করাচি চলে যান তিনি। জিয়াউর রহমান ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কমিশন পান ১৯৫৫ সালে। ১৯৬৬ সালে তিনি কাবুলে পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে ইন্সপেক্টর হন এবং একই বছর শেষদিকে কোয়েটা স্টাফ কলেজে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব দিয়ে তাকে পাঠানো হয় চট্টগ্রামে। আর সেই চট্টগ্রাম থেকেই তার শোনানো মন্ত্রে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এ দেশের জনগণ। অর্জিত হয় স্বাধীনতা।

মহাসচিবের বাণী : ‘সরকার দেশে একদলীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে’ : দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতির ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি সব সঙ্কটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা, স্বাধীনতাযুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে তার ভূমিকা অনবদ্য।

তিনি বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রারম্ভে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘোষণায় দেশের তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ মরণপণ যুদ্ধে শামিল হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষে জাতি বিদেশী শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে বিজয় অর্জনের অব্যবহিত পরে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর দুর্বিনীত দুঃশাসনে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা ও কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র মাটিচাপা পড়ে। ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন।


উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অবস্থা থেকে খাদ্যরফতানিকারক দেশে পরিণত করেন। আধুনিক ও স্বনির্ভর দেশগঠনের পদক্ষেপ নেন। এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা কখনোই মেনে নিতে পারেনি। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের নির্মমতা চারিদিকে বিদ্যমান। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে বর্তমান সরকার। সেজন্য গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এখনো তিনি কার্যত বন্দী। অসুস্থ হয়ে তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন। তার মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।

১৫ দিনের কর্মসূচি : জিয়ার ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে আছে, আজ ৩০ মে ভোরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীর কালো ব্যাজ পরিধান, সকাল সাড়ে ৯টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে সিনিয়র নেতাদের পুষ্পমাল্য অর্পণ, বেলা ১টায় বিএনপি ঢাকা মহানগর এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও পুষ্পমাল্য অর্পণ, ৩১ মে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

৩০ ও ৩১ মে দুই দিন রাজধানীর ৮০টি স্পটে অসহায়-দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও কাপড় বিতরণ করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা। এছাড়া জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের ওপরে ১ জুন স্বেচ্ছাসেবক দল, ২ জুন ছাত্র দল, ৩ জুন যুবদল, ৫ জুন মৎস্যজীবী দল, ৬ জুন শ্রমিক দল, ৭ জুন জাসাস, ৮ জুন তাঁতী দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা, ৪ জুন মহিলা দলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল এবং ৯ জুন জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে শহীদ জিয়ার ওপর প্রকাশিত বই প্রদর্শনীর কর্মসূচি রয়েছে। ১ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত সারা দেশে জেলা ও মহানগরীতে ইউনিটের উদ্যোগে আলোচনা সভা হবে। জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন পোস্টার প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে।

জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বগুড়া জেলা বিএনপি গৃহীত ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথম দিন গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের ওপর ভার্চুয়াল আলোচনা সভা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো: সিরাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম ) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা মো: মোশারফ হোসেন, বগুড়া পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা মো: রেজাউল করিম বাদশা, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এ কে এম সাইফুল ইসলাম ও ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, আলী অজগর তালুকদার হেনা, লাভলী রহমান, এম আর ইসলাম স্বাধীন, কে এম খায়রুল বাশার, মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, সহিদ উন নবী সালামসহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শেষে জিয়াউর রহমানের রূহের মাগফিরাত, বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনাসহ জিয়া পরিবারের জন্য দোয়া করা হয়।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top