শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি, পরিবহণ নেতাদের ‘না’

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২১ ১০:১৩; আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৩৭

সংগৃহীত ছবি

গণপরিবহণে বিশেষ করে বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে পরিবহণ শ্রমিকদের সাথে তাদের সংঘাতও হচ্ছে। বাস থেকে শিক্ষার্থীকে ফেলে দেয়া এবং দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷

পরিবহণ মালিকরা দাবি করেছেন, গত কয়েকদিনে কমপক্ষে ৪০টি বাস ভাংচুর করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা অস্বীকার করে বলেছেন, পরিবহণ শ্রমিকদের খারাপ ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাস ভাড়া যেভাবে বেড়েছে তাতে ‘হাফ পাস’ বা অর্ধেক ভাড়া না হলে চরম বিপাকে পড়ছেন তারা। অনেক অভিভাবকই এই খরচের বাজারে হিমশিম খাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেই। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা তাদের দাবি নিয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে চাইলেও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও দাবি
ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার পরই শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি সামনে আসে। এ নিয়ে শনিবার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রী হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন।

ওই ছাত্রী জানান, তিনি শনিবার সকালে শনির আখড়া থেকে তার কলেজ বকশিবাজারে ‘ঠিকানা পরিবহণ’ কোম্পানির বাসে আসছিলেন। নতুন হিসেবে ভাড়া ১৫ টাকা, শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি ১০ টাকা দিতে চান। সুপারভাইজারকে ২০ টাকার একটি নোট দিয়ে ১০ টাকা ফেরত চান। কিন্তু টাকা না দিয়ে এ সময় তার সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘এরপর বাসটি কলেজের কাছাকাছি এলে আমাকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে পাঁচ টাকা ছুড়ে দেয়া হয়। আর তখন আমাকে চরম খারাপ কথা বলা হয়, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

এর প্রতিবাদে বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রীরা রোববার কলেজের সামনে ওই বাসের কর্মচারীর শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে ১৬ নভেম্বর দনিয়া কলেজের এক শিক্ষার্থীকে যাত্রাবাড়ি এলাকায় বাস থেকে ফেলে দেয়ার অভিযোগে ওইদিন ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করে।

‘রজনীগন্ধা’ নামে একটি পরিবহণের বাসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন তারা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুল ইসলাম সাঈদ জানান, চারদিন আগে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বাস থেকে ধাক্কা মেরে নামিয়ে দেয়া হয়। তাকে শ্লীলতাহানির হুমকিও দেয়া হয়। গত সপ্তাহে রামপুরায়ও একজন শিক্ষার্থীকে বাস থেকে ফেলে দেয়ার পর প্রতিবাদে অর্ধশত বাস আটক করেছিলো শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, বাস ভাড়াসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমরা যারা শিক্ষার্থী তাদের সবার পরিবার স্বচ্ছল নয়। তাই মানবিক কারণে হলেও হাফ পাস চালু করার দাবি জানাচ্ছি। আগে এটা ছিল। কিন্তু এখন কেন থাকবে না

তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটা মুখে নয়, সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটা করা দরকার। না হলে শিক্ষার্থীদের সাথে পরিবহণ শ্রমিকদের এই ঝামেলা চলতেই থাকবে।

সাইদুল ইসলাম সাঈদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস চলে আসছিলো। কিন্তু পরিবহণ মালিকরা সেটা গায়ের জোরে বন্ধ করে দিয়েছেন। আর পরিবহণ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণও দরকার। যাতে তাদের আচার ব্যবহার ভালো হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের নয় দফার সবশেষটিতে ঢাকাসহ সারাদেশে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করার দাবি ছিল৷

বাসমালিকদের বক্তব্য
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘হাফ পাসের কোনো আইন নাই। আমাদের ভাড়ার যে চার্ট করে দিয়েছে বিআরটিএ, সেখানেও হাফ পাস বলে কিছু নাই। আগে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। তবে এখন আর সম্ভব নয়। ঢাকায় এখন প্রচুর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি বাসেই চার-পাঁচজন স্টুডেন্ট থাকে। তাদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিলে বাস মালিকরা চলবেন কীভাবে।

তিনি বলেন, ‘গত বছর যোগাযোগমন্ত্রী বিআরটিসি বাসে হাফ পাসের কথা বলেছিলেন। সরকার চাইলে বিআরটিসির বাস আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। ছাত্রদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিসও চালু করতে পারে।’

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা বিআরটিএর চেয়ারম্যানের সাথেও কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি কোনো সমাধান দেননি।

তিনি অভিযোগ করেন, গত কয়েকদিনে ছাত্ররা তাদের দাবি আদায়ের নামে ৪০টি বাস ভাঙচুর করেছে। শিক্ষার্থীদের বাস থেকে ফেলে দেয়া এবং ধর্ষণের হুমকির অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

এনিয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারকে চেষ্টা করেও টেলিফোনে পাওয়া যায়নি। তিনি মোবাইলে এসএমএস এরও জবাব দেননি।

তবে বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষক তাজুল ইসলাম জানান, তাদের কলেজের সামনে দিয়ে চলাচলকারী ঠিকানা ও মৌমিতা পরিবহণ হাফ পাস চালু রাখার কথা জানিয়েছে। ছাত্রীদের বিক্ষোভের পর পরিবহণ কোম্পানির কর্মকর্তারা তাদের কলেজে এসে তা জানিয়ে যায়। আর ছাত্রীদের সাথে যাতে কোনো পরিবহণ কর্মচারী খারাপ ব্যবহার না করে সে ব্যবস্থাও তারা নিবে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে প্রথম চারটি বাস দিয়ে সরকারি গণপরিবহণ চালুর সময় ছাত্রদের জন্য হাফ পাস ব্যবস্থা চালু হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে সব ধরনের গণপরিবহণে ছাত্রদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয়ার মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়। তারপর থেকে তা চলে আসছিলো। ‘সিটিং সার্ভিস’ চালু হওয়ার পর থেকে সেটি উঠে যেতে থাকে। তবে কিছুদিন আগেও বিভিন্ন রুটে যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয়া হচ্ছিল। কিন্তু সর্বশেষ ভাড়া বাড়ার পর এই রেওয়াজ তুলে দেন পরিবহণ মালিকরা।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top