এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে ১১৫ শতাংশ

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারী ২০২২ ১৯:৪৮; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৩:৫৯

ছবি: প্রতীকী

দেশে এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। দৈনিক নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হারও ৭ শতাংশের কাছাকাছি। এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা গতকাল রবিবার সকাল পর্যন্ত ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ফের বন্ধ হবে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, ১৫ জানুয়ারির পর টিকা ছাড়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে পারবে না। আপাতত

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ভ্রমণে নিরুৎসাহ করছে সরকার। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারও বলেছেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ভ্রমণ না করাই ভালো স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, শনাক্তের হার পৌনে ৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। যখন থেকে বাড়ছে, তখন থেকেই সতর্কবাণী দিচ্ছিলাম। পরিস্থিতি দেখে কয়েক দিনের মধ্যে বিধি-নিষেধের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আটটি বিভাগীয় শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৬০ শয্যাবিশিষ্ট হার্ট, কিডনি ও ক্যান্সার চিকিৎসার সমন্বিত ইউনিট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যা বলছে

গতকাল দুপুরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানান, দেশে এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনা শনাক্ত বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। গত শনিবার পর্যন্ত আগের সপ্তাহে দেশে ছয় হাজার ৩০০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা এর আগের সপ্তাহের চেয়ে তিন হাজার ৩৭৬ জন বেশি। এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১১৫ শতাংশ।

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ২১ হাজার ৯৮০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে এক হাজার ৪৯১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৬.৭৮ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫.৭৯ শতাংশ। এ সময়ে করোনায় মারা গেছে তিনজন। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১০২।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে চিন্তা

করোনার এই পরিস্থিতিতে অনেকের প্রশ্ন, আবারও কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে যাচ্ছে? শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল আশুলিয়ায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেছেন, এখনো ভাবছি না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার কথা। যত দিন সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে চাই। শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে।

ভারত ভ্রমণে সতর্কতা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল দুপুরে ঢাকায় গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে বিদেশি কূটনীতিকদের টিকার বুস্টার ডোজ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেন, ভারত সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। যদি ভ্রমণ করতেই হয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।

একই অনুষ্ঠানে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার ভারতে ভ্রমণ নিয়ে বিধি-নিষেধ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ভারতে কভিড সংক্রমণ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করাই ভালো। তবে স্থলবন্দরগুলো খোলা আছে। জরুরি প্রয়োজনে ভিসাব্যবস্থাও চালু রাখা হয়েছে। ১১ জানুয়ারি থেকে ভারতে প্রবেশের পর সাত দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

স্থলবন্দর পরিস্থিতি, বেনাপোল: বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত কমেছে। গত মাসে দিনে তিন হাজারের কাছাকাছি মানুষ এই চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে হাজারের মতো। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছে আট হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছে তিন হাজার ২৪৭ জন, ভারত থেকে এসেছে চার হাজার ৯১৬ জন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভারতে সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় এ চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। ভারতফেরত ১২ বছরের বেশি বয়সী যাত্রীদের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। মেডিক্যাল ও বিজনেস ভিসা ছাড়া কাউকে ভারতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না সে দেশের ইমিগ্রেশন। ভারত থেকে আসা সব যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

যশোরের সিভিল সার্জন আবু শাহীন বলেন, ‘ভারত থেকে গত মঙ্গলবার দুজন করোনা পজিটিভ যাত্রী দেশে ফেরত এসেছে, এটা আমাদের কাম্য নয়। যেখানে করোনা পজিটিভ ধরা পড়বে, সেখানে আইসোলেশনে থাকার কথা। নইলে এরা ভাইরাস ছড়াবে।’

ভোমরা: ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি যাত্রী যাতায়াত আগের তুলনায় কমে গেছে। স্থলবন্দর সূত্র জানায়, করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা না আসায় বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়নি। তবে আগের করোনা সতর্কতা মেনে চলছে সব কার্যক্রম। বিশেষ করে পাসপোর্টধারী যাত্রী ও ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপারদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাবান্ধা: চারদেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধায় যাত্রী যাতায়াত আগের চেয়ে কমেছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন নজরদারি নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষও উদাসীন। বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা ভিনদেশি গাড়িচালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ইমিগ্রেশনে সব সময় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের পাওয়াও যায় না। এতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন ঢুকে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বুড়িমারী: লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ৭২ ঘণ্টা মেয়াদি করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদ দেখাতে হচ্ছে। বর্তমানে ভারত ও নেপাল থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আসছে। গত এক সপ্তাহে এই স্থলবন্দর দিয়ে ৫৮ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশে এসেছে ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ৪৫ জন। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া ভারতীয় ট্রাকচালকদের ট্রাকের মধ্যেই অবস্থান করতে হবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top