ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আর নেই

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২১; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৪

ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বারিধারা জামে মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ জোহর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। এদিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি এম ওবায়দুল হাসান। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অনেকে।

নির্ভীক সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ছাত্রজীবনে স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যান এবং মিডল টেম্পল-ইন এ ভর্তি হন। সেখান থেকে ফিরে এসে ১৯৬৫ সালে তিনি হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন।

যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি কমনওয়েল্‌থ প্রেস ইনস্টিটিউটেরও একজন সদস্য ছিলেন। ইউরোপীয় কমন মার্কেট কমিশনের আমন্ত্রণে তিনি ব্রাসেলস পরিদর্শন করেন। চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে ১৯৬৯ এবং ১৯৮৯ সালে সরকারি প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য হিসেবে চীন সফর করেন।

১৯৬৯ সালে বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর ইত্তেফাক সম্পাদনার গুরুদায়িত্ব তিনি পালন করেন। পরে ১৯৭৩ সালে ইত্তেফাকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হন। একই বছর বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া-কাঁঠালিয়া আসন থেকে নির্বাচিত হন। সংসদে তিনি নিবর্তনমূলক যেকোনো আইন পাসের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। রাষ্ট্রপতির ৫০ নম্বর আদেশ জারির সময় তিনি বিরোধিতা করেন। পরবর্তীকালে সরকার আদেশটি রদ করে।

১৯৭৫ সালে সংবিধানের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তন করে বাকশাল শাসন প্রবর্তন হলে প্রতিবাদ স্বরূপ সংসদ সদস্য পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন। ১৯৭৬ সালের নভেম্বর মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন মাস ডিটেনশনে আটক রাখার পর ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ব্যাপারে উদার ও স্বাধীন মতামত রাখার জন্য তিনি ‘নিউ নেশন’ নামে একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন, যা পরবর্তীকালে দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশে প্রথম গঠিত প্রেস কমিশনেও তাকে সদস্য করা হয়। প্রেস কমিশনের রিপোর্ট প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন (২০০০-২০০১) এবং আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষায় মূল্যবান অবদান রাখেন। ১৯৯০ সালে বহুল আলোচিত ‘৩১ জন বুদ্ধিজীবীর বিবৃতি’র তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা এবং স্বাক্ষরদাতা। এই বিবৃতিতে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে নির্দলীয় জাতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়েছিল।

ওয়ান-ইলেভেনের পর তিনি এক বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।

২০১৮ সালের ১৬ই অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে আলোচনার জেরে তোপের মুখে পড়েন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মানহানির মামলায় ২০১৮ সালের ২২শে অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিন মাসের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর ২০১৯ সালের ২৭শে জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ: বাস্তবতা ও প্রত্যাশা’, ‘গণতন্ত্রের সাফল্য চাহিয়াছি’, ‘ঘুরে দাঁড়াতে হবে’, ‘আমার জীবন আমাদের স্বাধীনতা’, ‘বাংলাদেশ: কি চেয়েছি, কি পেয়েছি’, ‘অবিস্মরণীয় মানিক মিয়া’।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top