স্বতন্ত্র কৌশলে’ অস্বস্তি বাড়ছে আওয়ামী লীগে

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২৫; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪৫

ছবি: ফাইল

ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নিলুফার আনজুম। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী। কিন্তু এই আসনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের আরও ছয়জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁরা ভোট করলেও প্রত্যেকেই দলের পদধারী। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে মাঠে নেমেছেন। খরব প্রথম আলো।

এ আসনে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, জাকের পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, এনপিপি এবং দলনিরপেক্ষ স্বতন্ত্র আরও প্রার্থী আছেন। তবে স্থানীয় লোকজনের ধারণা, এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মূল প্রতিপক্ষ হবেন আওয়ামী লীগেরই নেতারা।

ময়মনসিংহ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজিম উদ্দীন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ হাসান, উপদেষ্টা নাজনীন আলম, সদস্য মোর্শেদুজ্জামান সেলিম, সাবেক উপদেষ্টা মতিউর রহমান এবং গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সাহা। আমাদের নেত্রী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিযোগিতা করার একটা সুযোগ দিয়েছেন। তবে নৌকার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করবেন, সেটা হবে না। শুধু গৌরীপুর নয়, ময়মনসিংহের ১১টি আসনের ৯টিতেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দল শিথিলতা দেখিয়েছে বলে অনেকে স্বতন্ত্র হয়েছেন। তবে শেষ বিচারে নৌকার পক্ষেই থাকতে হবে। প্রচার শুরু হলে দলের অন্য পদধারীরা স্বতন্ত্রের পক্ষে থাকবেন না।

গত ২৭ নভেম্বর ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। সেদিনই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন, দলীয় নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতেই এই সিদ্ধান্ত বলে দলীয়সূত্র জানিয়েছে। এর ফলে ২২৯টি আসনেই মনোনয়ন না পাওয়া নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে কেউ কেউ বাদ পড়েছেন। আবার আপিলে ফিরেও পাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে মনে করছেন, অন্তত ১৩০টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে দলের এক বা একাধিক শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে ৮০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এতে অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হেরে বসতে পারেন।

জেলা হিসেবে, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, গাজীপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্তি দেখাচ্ছেন, যা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের ভাবাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এরই মধ্যে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের জোট-মিত্রদের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্রদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর অনুরোধ এসেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটার টানতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দরকার আছে। কাউকে চাপ দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হবে না।

এ বিষয়ে গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিযোগিতা করার একটা সুযোগ দিয়েছেন। তবে জোরজবরদস্তি করবেন, নৌকার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করবেন, সেটা হবে না। শৃঙ্খলার সঙ্গে থাকতে হবে।’

আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে মনে করছেন, অন্তত ১৩০টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে দলের এক বা একাধিক শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে ৮০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম পিরোজপুর-১ আসনে দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছেন ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর আপন ভাই হাবিবুর রহমান পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। আরেক ভাই মুজিবুর রহমান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর স্ত্রী সালমা রহমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, আউয়াল পরিবারের প্রভাবে দলীয় অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছে। এরই মধ্যে পিরোজপুরের ওই আসনে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সদর উপজেলার বটতলা এলাকায় নৌকার সমর্থকদের হামলায় গত শনিবার আহত লালন ফকির (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে গতকাল।

বরিশাল-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। জাহিদ ফারুক ও সাদিকের মধ্যে রেষারেষি পুরোনো। এর মধ্যে দুজনই একে অপরের মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। এতে নির্বাচনী এলাকায় উত্তেজনা বেড়েছে।

রাজশাহীর প্রায় সব আসনেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। তবে রাজশাহী-৬ আসন ইতিমধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও প্রবীণ নেতা রাহেনুল হক। তাঁকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেরাজুল হকের সমর্থন দেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

একইভাবে ঢাকা-১৯ আসনে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুরাদ জং। গাজীপুর-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের আসনে স্বতন্ত্র হয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। গাজীপুর-২ আসনে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের আসনে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম। দুজনই আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ছেলে খালেদ শওকত আলী।

ফরিদপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে গত দুই নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। এবারও নিক্সন চৌধুরী জাফর উল্লাহকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে আছেন।

নরসিংদী-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ নজরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে বেশ খারাপ সম্পর্ক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামানের। এবার নৌকাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কামরুজ্জামান। পুরো জেলা আওয়ামী লীগ এখন দুই ভাগে বিভক্ত।

বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সংসদ সদস্য পংকজ নাথ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা দুজনই একে অপরের প্রার্থিতা বাতিলে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে দলে উত্তেজনা বাড়িয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, স্বতন্ত্র কৌশলে দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। এ পরিস্থিতিতে দলে অস্বস্তি বাড়ছে বলে তাঁরা মনে করছেন।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top