ভেতরে ভেতরে শক্তি বাড়াচ্ছে জামায়াত

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:১২; আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২৮

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় এক দশক কোণঠাসা হয়ে থাকার পর রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলীয় শক্তি বাড়াতে ভেতরে ভেতরে চালানো হচ্ছে নানামুখী কাজ। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারা দেশে সংগঠন চাঙ্গা করার দিকে নজর দিয়েছে দলটি। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে মহানগর, থানা ও উপজেলা পর্যায়ে রুকন (সদস্য) সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে।

গত দুই মাসে সম্মেলন হয়েছে ২০টিরও বেশি সাংগঠনিক জেলায়। এ ছাড়া নবাগত ও অগ্রসর কর্মীদের জন্য কয়েকটি শিক্ষা শিবির, সহযোগী সদস্যদের সভা ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা এবং নির্বাহী পরিষদের একাধিক সভা ও বিশেষ রুকন সম্মেলনও করেছে জামায়াত। কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সম্প্রতি জামিনে কারামুক্ত হওয়ায় সাংগঠনিক তৎপরতা আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জামায়াতে ইসলামী সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে কর্মসূচি ঘোষণারও চিন্তা চলছে। প্রাথমিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও সংকট নিরসনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, পোস্টার লাগানো ও লিফলেট বিতরণের কথা ভাবছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ। ট্রাইব্যুনালে বিচারে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ২০১৩ সালে আদালত রায় দেন। এরপর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে রাজনৈতিক দল বা সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার শুরু করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়।

এসব কারণে প্রায় এক দশক রাজনতিতে কোণঠাসা হয়ে ছিল জামায়াত। শীর্ষ নেতাদের বেশ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পাশাপাশি কেউ কেউ দেশত্যাগ করেন। একটি অংশ জামায়াত ছেড়ে নতুন দল গঠন করে। অনেকে আবার রাজনীতি ছেড়েছেন। এসব সত্ত্বেও নানা কৌশলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে জামায়াত। দীর্ঘ বিরতির পর গত বছর প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করে দলটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদারে মনোযোগী হয়েছেন দলের নেতারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে নানামুখী সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে জামায়াত। বড় জেলাগুলোতে একক সম্মেলন করা হয়েছে। আবার উপজেলা, থানা ও ছোট জেলাগুলোর কয়েকটি একত্র করে একই স্থানে সম্মেলন করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মী প্রশিক্ষণের জন্য করা হয়েছে শিক্ষা শিবির। অগ্রসরমান ও নবাগত কর্মীদের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে সহযোগী সম্মেলন। এসব অনুষ্ঠানের কয়েকটি হয়েছে সশরীরে উপস্থিতিতে, আবার কয়েকটি হয়েছে ভার্চুয়াল। জেলা-উপজেলা ও থানা পর্যায়ে কর্মীরা সশরীরে উপস্থিত হলেও কেন্দ্রীয় নেতারা ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন।

জানা গেছে, দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রায় প্রতিদিনই কোনো কোনো এলাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সশরীরে কিংবা ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন। দলটির শীর্ষ নেতারা নানাভাবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছেন। এক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের উদ্যোগে দলটির রুকনপ্রার্থী ও অগ্রসরকর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ জানুয়ারি ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকা উত্তর জামায়াত প্রীতি সমাবেশ করে। এরপর ১৬ জানুয়ারি একই ধরনের ভার্চুয়াল কর্মসূচিতে অংশ নেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ১৭ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের প্রথম সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯ জানুয়ারি গাজীপুর মহানগর জামায়াতের ইউনিট দায়িত্বশীল এবং একই দিনে ঢাকায় শেরেবাংলা নগর উত্তরে জামায়াতের ওয়ার্ড দায়িত্বশীল সম্মেলন হয়। ২০ জানুয়ারি দক্ষিণখানে বার্ষিক রুকন সম্মেলন হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ জানুয়ারি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে দেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন হ্রাস ও চরম অর্থনৈতিক সংকটে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এরপর ২২ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্রশিবিরের সারা দেশের শাখা দায়িত্বশীলদের দিনব্যাপী কর্মশালা, ২৩ জানুয়ারি উত্তরায় জামায়াতের দায়িত্বশীল সমাবেশ, ২৬ জানুয়ারি ভাসানটেক, কাফরুল ও উত্তরায় জামায়াতের বার্ষিক দায়িত্বশীল সম্মেলন, ২৮ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের রুকন সম্মেলন, ৩০ জানুয়ারি হাতিরঝিলে ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলন, ১ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর ও ভাসানটেক জামায়াতের বার্ষিক রুকন সম্মেলন, ২ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও-ভাটারা, গুলশান ও মোহাম্মদপুরে রুকন সম্মেলন, একই দিনে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের প্রতিনিধি সম্মেলন, ৪ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগরে রুকন শিক্ষা শিবির, ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণের রমনা থানায় রুকন সম্মেলন, কুমিল্লায় ওয়ার্ড ও ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলন এবং চট্টগ্রাম মহানগর কর্মপরিষদ অধিবেশন, ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের থানা ও বিভাগীয় দায়িত্বশীল সমাবেশ এবং ৯ ঢাকা দক্ষিণের সহযোগী সদস্য সম্মেলন ও মোহাম্মদপুর জোনের ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ ছাড়া গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিলেট মহানগর জামায়াতের বার্ষিক রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। একই দিন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ জামায়াতের রুকন সম্মেলন ও মোহাম্মদপুরে থানা শূরা, কর্মপরিষদ ও ওয়ার্ড দায়িত্বশীল শিক্ষা শিবির এবং গত ২২ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানায় অগ্রসরকর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি আঞ্চলিক নেতারাও বক্তব্য দেন।

জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলসহ অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। এর মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ছাড়া পান সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ৩০ মাস ৬ দিন পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি ছাড়া পান নায়েবে আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। এ ছাড়াও কারামুক্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে জামায়াতে ইসলামীর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। জামায়াত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তার অন্যতম কারণ হলো জামায়াতে ইসলামী একটি সুশৃঙ্খল, গণতান্ত্রিক, গণমুখী, কল্যাণকামী ও আদর্শবাদী দল। ইতিবাচক এসব দিক যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আগামীতে আন্দোলন-সংগ্রামকে আরও শানিত করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।’




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top