ক্ষমতায় গেলে দলের মতো দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব: জামায়াত আমির
রাজ টাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৫ ১৯:১৬; আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ১৩:১২

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে দলের মতো দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে দাবি করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তার ভাষায়, ‘দলকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তেমনিভাবে দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’
শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
এসময় জামায়াত আমির আরও দাবি করেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতার বেগমপাড়া কিংবা পিসি পাড়া নেই। আমাদের কেউ পালায়নি, পালাবেও না।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই জামায়াত নেতারা সংকটের সময় পালিয়ে না গিয়ে বরং দেশে ফিরে এসে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেশত্যাগ করে বিদেশে দ্বিতীয় ঠিকানা বানানোর মতো কোনো নেতা জামায়াতে নেই।’
তিনি বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসে না, তারাই ব্যক্তিস্বার্থে বেগমপাড়া বানিয়ে সরে পড়েছে। অন্যদিকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তাদের বিচারিক হত্যাও ঘটেছে।’
বিগত ৫৪ বছরে জামায়াত কোনো নাগরিকের প্রতি অবিচার করেনি দাবি করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতের কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। থাকবেও না। আমরা দল পরিচালনায় যেমন শৃঙ্খলাবদ্ধ, তেমনিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনাও করতে পারব। যারা নিজেদের দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশেরও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হবে।’
ইসলামকে পৃথিবীর একমাত্র অসাম্প্রদায়িক ধর্ম উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, ধর্ষক, খুনি ও লুটেরাদের ভয় থাকবে। এজন্যই তারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র মানে নারীদের চলাচলের ওপর কোনো বিধিনিষেধ নয়।’
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যেখানে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত পরিবারের মা-বোনেরা বাজারে যেতে পারেন, হাসপাতালে যেতে পারেন, মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে পারেন, সেখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে কেন নারীদের স্বাধীনতায় বাধা আসবে?’
তার ভাষায়, ‘রাষ্ট্র কোনো ধর্ম বা লিঙ্গভেদ করতে পারে না। ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারী-পুরুষ, মুসলিম-অমুসলিম সব নাগরিক সমান মর্যাদার অধিকারী হবে। জামায়াত একটি ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে চলতে চায়, যেখানে থাকবে না বৈষম্য বা জুলুম।‘
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। সম্মেলনে দারসুল কুরআন পেশ করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা এটিএম মা’ছুম।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের মানুষের কল্যাণে আমরা ইতোমধ্যে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’
তিনি জানান, ‘জামায়াতের চলমান রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা কোনো ষড়যন্ত্রে থেমে যায়নি, যাবে না। একইসঙ্গে তিনি একটি আধুনিক, মানবিক ও কল্যাণভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণে দলটির নেতৃত্বে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সম্মেলন পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, ড. হেলাল উদ্দিন, দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান এবং মো. শামছুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: