বাগমারায় বন্যা ও বৃষ্টিতে বানভাসিদের জীবন বিপর্যস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা | প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:০৯; আপডেট: ১ অক্টোবর ২০২০ ০২:১১

বৃষ্টি ও বন্যায় জমে থাকা পানিতে দাড়িয়ে অসহায় বৃদ্ধ

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় দ্বিতীয় দফায় টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ৭টি ইউনিয়নের ফসল ও নিম্ন এলাকার বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। অব্যাহত গত ৪ দিনের প্রবল বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

গত এক মাস পর দ্বিতীয় দফায় বন্যায় এলাকার ব্যাপক হারে ক্ষতির পরিমান বেড়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে বাড়ি-ঘর তলিয়ে মানুষ গৃহবন্দী রয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে মাটির ঘর-বাড়ি। পানি থেকে রক্ষার্থে উঁচু বাঁধ-বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। এক দিকে নীচে পানি উপর দিকে বৃষ্টি নামে এতে যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতবস্থায় গত ৫ দিনেও সরকারী ভাবে কোন সাহায্য সহযোগীতা বানভাসীদের মিলেনি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, প্রতিনিয়ত বানভাসিদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে এবং স্থানীয় সংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের দেয়া ১৭ মেট্রিক টন চাল বানভাসিদের মধ্যে বিতরণের প্রস্ততি চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণের সাথে উজানের পানি মিলে পানির তোড়ে ফের এলাকায় দেখা দেয় প্রবল বন্যা। এছাড়া দ্বীপপুর ইউনিয়নের জুলাপাড়ার মরাঘাটির নিকটের ভাঙ্গা বেড়ী বাঁধ দিয়ে উপজেলার উত্তর এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা আর কয়েক দিনের অতি বৃষ্টিতে নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

এতে করে উপজেলার কাচারী কোয়ালীপাড়া, ইউনিয়ন, দ্বীপপুর, বাসুপাড়া, ঝিকরাসহ ৫টি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়। অতি বন্যায় রোপা-আমন ও আউশ ধান, পানবরজ, এবং সবজি ক্ষেতসহ প্রায় ৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে বড়বিহানালী ইউনিয়নের বড়কয়া, সিন্দুরলংগ, বেড়াবাড়ি এলাকার শতশত পরিবারের মানুষ পানিবন্দির অবস্থা চোখে পড়ে। বড়কয়া গ্রামে বর্ষার পানি জমে ১৫/১৬ মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে।

ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবুল হোসেন জানান, বন্যা ও অতি বৃষ্টিতে অধিক ক্ষতি গ্রামের মাটির বাড়ি গুলোর মধ্যে বড়কয়া গ্রামের মৃত আফছার আলীর বিধবা স্ত্রী ফাতেমা বেওয়া, মৃত তমেল আলীর বিধবা কন্যা জয়নব, আশরাফুল ইসলাম, জয়নব, ও হমিরকুৎসা ইউনিয়নের আলোক নগর গ্রামের ভ্যান চালক মৃত সাহেবুল্লার ছেলে ভ্যানচালক মকলেছুর রহমানের মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে।

একই ভাবে শিতল কুমার, রন্জন, আবু বাক্কার ও বেড়াবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর, চঞ্চল, রহিদুলের বাড়ি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি গ্রস্তরা বাড়ি ছেড়ে অনেকে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়ি কিংবা উঁচু কোন স্থানে আশ্রয় নিয়ে অনাহারে অদ্ধাহারে জীবন যাপন করছেন।

ছোট কয়া গ্রামের গ্রাম পুলিশ জোনাব আলী বলেন, গত দু’ দিন আগে তার মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। বানভাসিরা বিবি ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বৃষ্টি-বাদলে কষ্টে জীবন যাপন করছেন। একদিকে বৃষ্টি অন্য দিকে বন্যা এতে মরার মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, বন্যায় কোন এলাকার মানুষ অভুক্ত নেই। প্রতিনিয়ত বানভাসিদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে এবং স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের দেয়া ১৭ মেট্রিক টন চাল বানভাসিদের মধ্যে বিতরণের প্রস্ততি চলছে। বানভাসিদের মধ্যে মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বানভাসিদের সহযোগীতা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

একই ভাবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, চলতি বন্যায় উপজেলার বড়বিহানালী ও দ্বীপপুর ইউনিয়নের বেশী ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বাসুপাড়া, শ্রীপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের ফসল ও বাড়ি ঘরের ক্ষতি হলেও দুরাবস্থা নেই। সরকারী ভাবে বানভাসিদের তালিকা চেয়ারম্যানদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয় গুলো নিয়ে তিনি উচ্চ মহলের সংগে কথা বলেছেন। শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ হবে বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান বলেন, এবারের বন্যায় কৃষকদের বেশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৩ শত হেক্টর জমির ধান ও ৭ হেক্টর জমির পান বরজ ক্ষতির একটি তালিকা করা হয়েছে। মঙ্গলবার তিনিসহ জেলা কৃষি উপপরিচালক কৃষিবিদ শামসুল হক এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতির এই সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কাফি/০২



বিষয়: বাগমারা


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top