তিনটি ভিডিও ভাইরাল

রাজশাহীর চারঘাটে ভূমি অফিসে প্রকাশ্যে ঘুস আদায়

রাজটাইমস ডেস্ক:  | প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২২ ২২:৪১; আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২২ ২২:৪৪

ছবি: সংগৃহীত

খাজনা ও খারিজসহ অন্যান্য সেবা পেতে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুস দিতে হচ্ছে। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সরদহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে ঘুস আদায় করছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে। খবর যুগান্তরের। 

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ঘুস আদায়ের একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের ভেতর ও বাইরের সেই সব ভিডিওতে একই ব্যক্তিকে ঘুসের টাকা আদায় নিয়ে দরকষাকষি ও টাকা নিয়ে পকেটে ভরতে দেখা যায়। স্থানীয়রা ঘুস গ্রহণকারী ব্যক্তিকে তহশিলদার আব্দুস সাত্তার বলে শনাক্ত করেছেন।

সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে তহশিলদার ঘুস নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও এর মধ্যেই হাতে পাওয়া সেসব ভিডিও যাচাই-বাছাই করেছেন চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন।

জানা গেছে, আব্দুস সাত্তার রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সরদহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) হিসাবে কর্মরত আছেন একমাসের কিছু বেশি সময় ধরে। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকায়।

সরদহতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি প্রায় প্রকাশ্যে ঘুস আদায় করছেন। অন্যদিকে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, টেবিলের সামনে টাকা হাতে নিয়ে বসে থাকা সেবা গ্রহীতাকে তিনি বলছেন, ৯০০ টাকা দিলে হবে? না না এতে হবে না, এভাবে হবে না। আশ্চর্য তো। গরিব মানুষও তো দিচ্ছে। আার আপনি তো মার্চেন্ট মানুষ। ৯০০ টাকা গুনে দিচ্ছেন, এটা কেমন কথা হলো! এ সময় বিভাগীয় কমিশনার অফিসের তদবিরে আসা আরেকটি কাজ প্রসঙ্গে তিনি আরেকজনকে বলছেন, কমিশনার অফিস থেকে ফোন কেন? এই অফিসে লোক নাই। তাহলে তো সাত দিন আটকাতে হয় কাজটা। তাহলে না তারা বুঝবেন। দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, তার টেবিলের সামনে বসে থাকা অপর সেবা গ্রহীতাকে ৪ হাজার টাকার সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে বলছেন তিনি। তা না হলে তিনি খাজনার চেক না কাটার হুমকি দিচ্ছেন।

তৃতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, তহশিলদার আব্দুস সাত্তার একজন সেবা গ্রহীতাকে অফিসের বাইরে নিয়ে গিয়ে একটি গাছতলায় দাঁড়িয়ে কথা বলার ফাঁকে আড়াল করে কয়েক দফায় তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পকেটে রাখছেন।

সরদহ ইউনিয়নের কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, সরদহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দুজন পিয়ন ও একজন তহশিলদার কর্মরত আছেন। নিজের চেয়ারে বসে তহশিলদার প্রকাশ্যে ঘুস লেনদেন করেন। অফিসের এক পিয়ন কোনো কোনো ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করে থাকেন। কয়েক দিন আগে যোগদান করেই অফিসকে ঘুসের রাজ্যে পরিণত করেছেন আব্দুস সাত্তার। তিনি টাকা ছাড়া কোনো কাজই করছেন না। তার চাহিদার কানাকড়ি কম হলেও তিনি সেবা গ্রহীতাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। ১০ টাকার খাজনাতেও তিনি ১০০ টাকা আদায় করেন। সরকারি খাতে ১০ টাকা জমা করে বাকিটা পকেটে ভরেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে তহশিলদার আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমি সরদহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একমাস হলো যোগদান করেছি। এখানে কাউকেই সেভাবে চিনি না। আমি কারও কাছ থেকে ঘুস নিইনি। ভিডিওতে কে ঘুস নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওটা আমি নই। অন্য কেউ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ভিডিওগুলো ইতোমধ্যে পেয়েছি এবং আমি দেখেছি। প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি তিনি সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার। ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনএ



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top