বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী চিকন সেমাইয়ের কদর অনেক

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫৭; আপডেট: ২ মে ২০২৪ ১৩:৫৯

ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার চিকন সেমাইয়ের সুনাম আছে। এখানকার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির পাশাপাশি পাইকারেরা কিনে নিয়ে বিক্রি করেন আশপাশের জেলাগুলোতে। বগুড়া শহরতলির বেজোড়া, কালশিমাটি, শ্যামবাড়িয়া নিশ্চিতপুর গ্রামে প্রতি বছর রমজান মাসের শুরু থেকে তৈরি করা হয় এই সাদা চিকন সেমাই।

কালশিমাটি গ্রামের বাবলু মিয়া গত ২০ বছর ধরে বাড়িতেই পবিত্র শবে বরাতের পর থেকে চিকন সেমাই তৈরির কাজ শুরু করেন। তিনি জানান, ময়দার সঙ্গে পানি মিশিয়ে মেশিনের সাহায্যে তৈরি করা হয় চিকন সেমাই। এরপর রোদে শুকিয়ে বাঁশের তৈরি খাঁচিতে প্যাকেট করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এ বছর ময়দার দাম প্রতি বস্তায় (৩৭ কেজি) ২০০ টাকা কমেছে। তাই খরচও কিছুটা কম হচ্ছে।

বাবলু মিয়া বলেন, দুই বস্তা ময়দা দিয়ে সেমাই তৈরি হয় ৭০ কেজি। পরে ২৫ কেজি করে সেমাই বাঁশের তৈরি খাঁচিতে প্যাকেট করে বিক্রি করা হয়। প্রতি খাঁচি সেমাই পাইকারি বিক্রি হয় ১ হাজার ৩০০ টাকা করে। কয়েক বছর আগেও রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এই গ্রামে আসতেন চিকন সেমাই কিনতে। কিন্তু এখন বিভিন্ন কোম্পানি নিজেরাই কারিগর দিয়ে মেশিন বসিয়ে চিকন সেমাই তৈরি করে নিজেদের নামে বিক্রি করেন। তার পরেও বগুড়া শহরের কিছু ব্যবসায়ী এখান থেকে সেমাই কিনে আশপাশের জেলাগুলোতে সরবরাহ করেন।

শুধু ময়দা আর পানির মিশ্রণে তৈরি করা চিকন সেমাই স্বাস্থ্যসম্মত উল্লেখ করে কালশিমাটি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি নুরুল ইসলাম বলেন, কমপক্ষে ৫০ বছর আগে পার্শ্ববর্তী বেজোড়া গ্রামে চিকন সেমাই তৈরির কাজ শুরু হয়। সেই সময় গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় হাতে মেশিন ঘুরিয়ে সেমাই তৈরি ছিল বেশ কষ্টকর। বেজোড়া গ্রাম থেকেই পর্যায়ক্রমে আশপাশের গ্রামগুলোতে চিকন সেমাই তৈরির কাজ শুরু হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে সব গ্রামেই বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকায় বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে মেশিন চালানোর কারণে মানুষের যেমন কষ্ট কমেছে, তেমনি অল্প সময়ে বেশি সেমাই তৈরি করা হচ্ছে।

গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কমপক্ষে ২০টি বাড়িতে সেমাই তৈরির কাজ চলছে। পানি আর ময়দার মিশ্রণ, রোদে শুকানো, খাঁচিতে প্যাকেটজাত করাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন নারীরা। তাঁরা জানান, রমজান মাসে সেমাই তৈরির কাজ করে যে বাড়তি আয় হয়, সেই টাকা দিয়ে ঈদের কেনাকাটা করেন।

কালশিমাটি গ্রামের লাভলী খাতুন ১৯৮৮ সাল থেকে চিকন সেমাই তৈরি করছেন নিজ বাড়িতে। তিনি একসময় বেজোড়া গ্রামে সেমাই তৈরির কাজ করতেন। সেখান থেকে কাজ শিখে নিজেই বাড়িতে মেশিন বসিয়ে প্রতিবছর রমজান মাসে সেমাই তৈরি করেন। তাঁর ছেলে খাঁচিতে ভরে বগুড়া শহরের রাজাবাজারে পাইকারি দোকানে বিক্রি করে আসেন। রমজান মাসে সেমাই তৈরি করে তিনি বাড়তি ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করেন।

বগুড়া শহরের রাজাবাজারে পাইকারি সেমাই বিক্রেতা হাবিব আকন্দ বলেন, অল্প আয়ের মানুষের মধ্যে বগুড়ার তৈরি চিকন সেমাইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও সেমাই বিক্রেতারা রাজাবাজার থেকে কিনে নিয়ে তাঁদের এলাকায় খুচরা বিক্রি করেন। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন কোম্পানি এই চিকন সেমাই নিজেরাই তৈরি কিংবা আমাদের কাছ থেকে কিনে প্যাকেটজাত করে তাদের নামে বেশি দামে বিক্রি করছে। ফলে যারা গ্রামে সেমাই তৈরি করে, তারা কম দাম পেলেও কোম্পানি নিজেদের নাম ব্যবহার করে অধিক মুনাফা করছে।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top