ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-ইন্সটাগ্রামে আসলে কী ঘটেছিল?
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২১ ০৫:৪৩; আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৬

টানা ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চালু হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। একই সময়ে ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের সেবাও পুনরায় চালু হয়।
সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত পৌনে ১০টার পর থেকে হঠাৎ করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকে মোবাইল ও কম্পিউটারের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ প্রবেশ করা যাচ্ছিলো না। ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে প্রবেশের পর এরর বা ব্রাউজার কানেক্ট হচ্ছে না বলে তাদের ডিভাইসের পর্দায় ভেসে ওঠে। পরবর্তীতে সাড়ে ৪টার পরে সাইটগুলো ফিরে আসতে শুরু করে।
জানা যায়, সাময়িক এই সংকটে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের। বাংলাদেশি মুদ্র্যা যার পরিমাণ ৫১ হাজার ৪১২ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া শেয়ার বাজারেও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ফেসবুককে।
সমস্যা সমাধানের পর সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জাকারবার্গ। ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি বলেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জার এখন অনলাইনে ফিরে এসেছে। আজকের এই সমস্যার জন্য দুঃখিত। আমি জানি যে আপনি আমাদের যতœশীল ব্যক্তিদের সাথে সংযুক্ত থাকার জন্য আমাদের পরিষেবার উপর কতটা নির্ভর করেন।
ফেসবুক ডাউন থাকার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে তবে সেটা বিশেষ কিছু লোকেশন কিংবা কিছু কিছু দেশের ক্ষেত্রে। তবে এবারই প্রথমবার এই ধরনের ঘটনা ঘটল যেখানে ফেসবুকের হেডকোয়ার্টারেও সব সেবা বন্ধ ছিল। এমনকি ফেসবুকের কর্মীরা যারা অনলাইনে ওয়ার্কপ্লেসে কাজ করেন, তারাও লগইন হতে পারেননি।
যাই হোক, এখন সবার প্রশ্ন ঘটনাটা আসলে কী ঘটেছিল? এর মূল কারণ ছিল ফেসবুকের DNS (Domain Name System) এর সমস্যা। সাধারণত একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম কাজ করে কতগুলো আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) এর ওপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ একটি কম্পিউটার যখন অন্য একটি কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে, তখন একে অপরকে চিনে থাকে আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে।
একইভাবে আমরা যখন ইন্টারনেটে কোনো ওয়েবসাইট কিংবা সার্ভারে প্রবেশ করি, তখন মূলত উক্ত সার্ভারে প্রবেশ করি তার নির্ধারিত আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে। প্রত্যেকটা সার্ভারের একটি নির্দিষ্ট আইপি থাকে যেটা হয় ইউনিক (মোবাইল নাম্বারের মতো, অন্য কারও সাথে মিলবে না)। যেমন ফেসবুকের অনেকগুলো আইপির মধ্যে একটি হলো- ৬৩.৬৯.১৭৬.১৩, কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এত আইপি এড্রেস কখনোই মনে রাখা সম্ভব নয়, তাই এর সহজ সমাধানে ব্যবহৃত হয় DNS (Domain Name System)। যার কাজ হচ্ছে আইপি এড্রেসকে নামে কনভার্ট করা।
উদাহরণ হিসেবে আমরা যখন facebook.com লিখি, তখন এই DNS প্রযুক্তি প্রথমে খুঁজে বের করে ঋধপবনড়ড়শ.পড়স এর সার্ভারের আইপি এড্রেস কী, তারপর facebook.com আর উক্ত সার্ভার আইপি এড্রেসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে আমাদেরকে সার্ভার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। ঠিক একইভাবে আমরা যখনই কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এই একই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, আমাদেরকে কষ্ট করে আইপি মনে রাখতে হয় না, শুধু ওয়েবসাইটের ঠিকানাটা মনে রাখলেই হয়।
এখন প্রশ্ন থাকতে পারে ফেসবুকের ডিএনএস সমস্যা হলে হোয়াটসঅ্যাপ আর ইনস্টাগ্রামেও কেন এর প্রভাব পড়বে? এর উত্তর হলো- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে সবার ডেটাই থাকে একটি সার্ভার সিস্টেমে এবং ব্যাকইন্ডে ডাটাবেস কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে সবাই ফেসবুকের ডিএনএস সিস্টেম (facebook.com) ব্যবহার করে, তাই ফেসবুকের ডিএনএস সমস্যা হওয়াতে বাকিদেরও হয়েছে।
যদিও ফেসবুক ইঞ্জিনিয়ারিং টিম থেকে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে যে “নেটওয়ার্ক রাউটিং সিস্টেম কনফিগারেশনে তারা কিছু পরিবর্তন পেয়েছে যে কারণে মূল সার্ভারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: