বড় ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে চোখ হারাতে বসেছে রাবি শিক্ষার্থী সাকিব

রাবি প্রতিনিধি: | প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৩ ২১:৩৬; আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪১

ছবি: সংগৃহীত

‘পুলিশের রাবার বুলেটে যখন বড় ভাই আহত, তখন তাকে উদ্ধারের জন্য আমি ছুটে যাই। তাকে নিয়ে আসার সময় আমরা পুলিশকে বলছিলাম, আমরা চলে যাচ্ছি।

কিন্তু পুলিশ আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে অঝোরে রাবার বুলেট ছুঁড়ে। এতে আমার পুরো শরীর, মাথাসহ দুটি বুলেট আমার এক চোখে এসে পড়ে। ফলে আমার এক চোখ এখন হারাতে বসেছি। আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল থেকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। জানি না এই চোখ আর ফিরে পাবো কিনা।’

শিক্ষার্থী-স্থানীয় সংঘর্ষে পুলিশের অতর্কিত হামলায় চোখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রাবি শিক্ষার্থী আলিমুল সাকিব এভাবে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া পুলিশি নির্মমতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।

পুলিশের রাবার বুলেট তার চোখে পড়ায় গুরুতর আহত হন তিনি। তার চিকিৎসা রাজশাহী মেডিকেল কলেজে আর সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ঢাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পুলিশের এই নির্মমতার শিকার শুধু আলিমুল সাকিব নয়, আরও দুই শিক্ষার্থী এ সংঘর্ষে রাবার বুলেটে তাদের চোখ হারাতে বসেছে। তাদেরকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। অন্য দুই শিক্ষার্থী হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন ইসলাম। তার রাবার বুলেট লাগায় দুচোখ মেলে তাকাতে পারছেন না এ শিক্ষার্থী। তার অবস্থা খুবই আশংকাজনক বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তার সহপাঠীরা।

অন্য আরেক শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ। তার চোখ ইটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। তাকেও ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

গত শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় বাসের ভাড়া নিয়ে এক রাবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের ইট-পাটকেল ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী এখনও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অনেকেই এখন সুস্থ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের গুরুতর আহত ১৫জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।

অনেকেই অপারেশন থিয়েটারে আছেন। আবার অনেককেই ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। তাদেরকে দেখতে গত রোববার (১২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা দেখতে আসেন।

সংঘর্ষের ঘটনায় দুচোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চোখ মেলে তাকাতে পারছেন না আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন আকাশ। দুচোখ বন্ধ রেখে কথা বলছিলেন এই শিক্ষার্থী ।

তিনি সংঘর্ষের রাতের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমরা সবাই নিরস্ত্র ছিলাম। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয়রা আমাদের ওপর ইট-পাটকেল ও পেট্রোল বোমা ছুঁড়ছিল। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে স্থানীয়রা পালিয়ে যায়। তখন শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর গেট খুলে রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করলে পুলিশ পানি ছিটাতে শুরু করে। আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে আসছিলাম। তখন পুলিশ আমাদের উপর টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। আমার দুই চোখে গুলি লাগায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। ছাত্রদের ওপর পুলিশ কেন অতর্কিতভাবে গুলি চালালো তা আমার বুঝে আসে না।

গুলিবিদ্ধ আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সব সময় যেকোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি সাধারণ শিক্ষার্থীরাই হয়। আমরা পড়াশোনার জন্য ক্যাম্পাসে এসেছি। পুলিশ আমাদের ওপর এভাবে চড়াও হবে আমরা কখনো ভাবিনি। তবে যেটা হয়ে গেছে সেটা আমাদের শিক্ষকরা দেখবেন। আমাদের আকুল আবেদন থাকবে আমাদের চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার যেন প্রশাসন দেখে। কারণ আমার পায়ের যে ব্যথা তা অসহনীয়। আমাদের শরীর ও পায়ের মধ্যে যে স্প্রিন্টার আছে, তা বের না করা পর্যন্ত আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের সকল চিকিৎসা ব্যয়ভার প্রশাসন দেখবে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার নিশ্চিত করেছেন। কোনো শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

মেডিকেলে শিক্ষার্থীদেরকে দেখাশোনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমরা আহত শিক্ষার্থীদের সবসময় খোঁজখবর রাখছি। তাদের চিকিৎসা সকল ব্যয়ভার আমরা বহন করছি। তাদের মধ্যে যারা গুরুতর আহত তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাচ্ছি আজ। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য স্যার তাদেরকে দেখে গেছেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top