রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২৫ টি অভিযোগের প্রমান পেয়েছে ইউজিসি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহের সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি।

উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল সবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের সুপারিশ করে এই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ইউজিসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম।

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ইউজিসিতে দাখিল করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ।  

পরবর্তীতে, ইউজিসি প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগগুলো তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরকে সদস্য করা হয়।

নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে সুপারিশসহ ৭৩৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানায় তদন্ত কমিটি।

দাখিল করা অভিযোগপত্রে ৩৬ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং ৭০০ পৃষ্ঠার সংযোজনী প্রতিবেদন রয়েছে। প্রতিবেদনে তাদের সম্পদের উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি‌ রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীকে অপসারণের সুপারিশও করা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইউজিসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয় জানায় তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটি রাবি ভিসি সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের মধ্যে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে (আচার্য) অসত্য তথ্য দেওয়া, শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।  

তদন্ত কমিটি শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা শিথিল করে নিজের মেয়ে এবং জামাতাকে নিয়োগ দেয়া সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে ৩৪ জন অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ পান।

এছাড়া ভিসি সোবহানের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি ১৮ মাস ধরে নানা অজুহাতে দখলে রাখার প্রমাণও পান তদন্ত কমিটি। উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্ত কমিটিকে অসহযোগিতার অভিযোগে রাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীকে অপসারণের সুপারিশ করা হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, তদন্ত কমিটি সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বুধবার (২১ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দিয়েছে। তদন্তে আমরা রাবি প্রশাসনের বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দফতর এসব বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেবে।

• এসএইচ