রাবিতে বিলম্বে যাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও অন্যান্য প্রশ্ন নিয়ে যা বলছে কর্তৃপক্ষ

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২৪ ১৩:১৭; আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ১৩:২০

ছবি: সংগৃহীত

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে নির্ধারিত সময়ে ট্রেনে উঠেও গন্তব্যে পৌঁছাতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল ৫ মার্চ, তার মূল কারণ ছিল রেললাইনের ত্রুটিজনিত কারণে আগের রাতে ট্রেনটির ঢাকায় আসতে বিলম্ব হওয়া এবং যাত্রার দিন ইঞ্জিনে হঠাৎ ত্রুটি দেখা দেয়া। বাংলাদেশের রেল কর্তৃপক্ষ এমনটা জানিয়েছে।

রাবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনে রাজশাহী পৌঁছানোর পর কেউ কেউ বিলম্বে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলেও কেউ কেন্দ্রে গিয়েও পরীক্ষা দিতে পারেনি এমন কোনো তথ্য তাদের জানা নেই।

গত সপ্তাহে রেলের একজন কর্মকর্তার 'বিশেষ উদ্যোগের সুবাদে' পরীক্ষা শুরুর মাত্র ২২ মিনিট আগে একটি ট্রেনে করে শিক্ষার্থীদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর খবর ভাইরাল হয়।

পরে এ নিয়ে অনেকে সংবাদ প্রকাশ করার পর, পরীক্ষার্থী সংখ্যা এবং তারা সবাই পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছেন কি না সামাজিক মাধ্যমে এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

তবে গত ৫ মার্চ ট্রেনের বিলম্বের কারণে কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি- এমন তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জানা নেই বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে।

তিনি ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার সাথেও জড়িত।

দেশের অন্যতম বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার মোট একক আবেদনকারী ছিল এক লাখ ৫৪ হাজার ৯৭৭ জন। তবে এদের মধ্যে অনেকে একাধিক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

এর মধ্যে এ ইউনিটে ৯১ শতাংশ, বি ইউনিটে ৯০ শতাংশ এবং সি ইউনিটে ৮২ শতাংশ আবেদনকারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক পাণ্ডে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, ‘স্পেসিফিক সংখ্যা আমরা হিসেব করি না। আর সাধারণত কিছু শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই অন্যত্র ভর্তি হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছরই আবেদনকারী ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যায় এমন পার্থক্য থাকে।’

গত ৫ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি ইউনিটে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা ছিল।

মূলত ৫, ৬ এবং ৭ মার্চ তিন দিনের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ৫ মার্চ মঙ্গলবার ভোরের ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেছিল বহু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক।

৬ মার্চের বিভাগের অন্য পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য মঙ্গলবারের ট্রেনে ছেলেকে নিয়ে উঠেছিলেন দেবাশীষ ঘোষ।

তিনি বিবিসিকে জানান, ট্রেনটি যাত্রী ভর্তি ছিল এবং আপাতদৃষ্টিতে তার কাছে বেশিরভাগই তার ছেলের মতো পরীক্ষার্থী মনে হয়েছে, যাদের অনেকের সাথে অভিভাবকেরাও ছিল বলে মনে হয়েছে তার কাছে।

তবে ৫ মার্চ বিকেলে পরীক্ষার কতজন শিক্ষার্থী ওই ট্রেনে ছিল তার সঠিক সংখ্যা রেলওয়ে ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেউই দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, এটি জানা তাদের পক্ষে সম্ভবও নয়।

‘এটি বলা কঠিন কারা কিভাবে আসছে। তবে যেহেতু রেল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ভিসিকে জানিয়েছে সে হিসেবে সাত শ’ জনের কথা আসছে। আমাদের এখানে যতগুলো হল, তার চারটি আমি নিজেই দেখেছি। তাই মোট সংখ্যা হয়তো এমনই বা কাছাকাছি হতে পারে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন অধ্যাপক প্রবীর কুমার পাণ্ডে।

যদিও ১২৫ জনের একটি তথ্য ভিসি দিয়েছেন, যারা নিজেরাই কয়েকটি হলে (পরীক্ষার) এসে দেরির কারণ হিসেবে ট্রেনে আসার কথা জানিয়েছিল বলে জানান তিনি।

ট্রেনটির কী হয়েছিল?

ধূমকেতু এক্সপ্রেস সেদিন সকাল ৬টায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বেলা ১২টার আগেই গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল।

কিন্তু আগের রাতে ওই ট্রেনটি সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস নামে ঢাকায় আসার সময় রেললাইনে ত্রুটির কারণে বিলম্ব হয়।

সেই দেরির কারণে ঘটনার দিন সকালে সময়মত যাত্রার প্রস্তুতিতে বিলম্ব হয় এবং পাশাপাশি হঠাৎ এর ইঞ্জিনেও ত্রুটি দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার।

‘কমিউনিকেশন্স লিংক ফেইলিওর। অর্থাৎ লাইনে ত্রুটির কারণে সমস্যাটি হয়েছিল। আর ট্রেনটি ছাড়ার সময় বা পরে ইঞ্জিনে ত্রুটি রেলের অনেক সময় হয়। সারাতে কখনো সময় কম লাগে, কখনো বেশি লাগে। তবে কাছাকাছি ইঞ্জিন থাকলে দ্রুত রিপ্লেস করে নেয়া হয়। যাত্রাপথে হলে নতুন করে ইঞ্জিন আনতে হয়তো সময় লাগে,’ বলছিলেন তিনি।

বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশে ট্রেনের যাত্রা ও গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্বের অভিযোগ অহরহই শোনা যায়।

কেন আলোচনা?

৫ মার্চ (মঙ্গলবার) সকালে তিন ঘণ্টা বিলম্বের কারণে বেলা সাড়ে ৩টায় রাজশাহী পৌঁছে পরীক্ষা দেয়া কঠিন হবে মনে করে হৈ চৈ শুরু করলে, রেলের গার্ডরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়।

বিবিসিকে রেল কর্মকর্তা অসীম কুমার তালুকদার বলেছেন, “ছাত্ররা গার্ডকে জানায় যেভাবেই হোক ৩টার মধ্যেই তাদের পৌঁছানো যাবে কি-না। আমরা জানতে চেয়েছিলাম কত শিক্ষার্থী আছে ট্রেনে। তারা গার্ডদের মাধ্যমে জানায় যে সাত শ’ মতো আছে। গার্ডরাও ট্রেন ঘুরে একই ধারণা দেয়ার পর আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম।”

এরপরে অসীম কুমার তালুকদার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে বিষয়টি জানান এবং পরীক্ষাটি কিছুক্ষণ পেছানোর ব্যবস্থা করা যায় কি-না অনুরোধ করেন।

পরে ভিসির নির্দেশে অধ্যাপক পাণ্ডের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ ও কথা হয় রেল কর্মকর্তার।

‘১১ বার কথা বলেছি আমরা। ভিসি খুব চাইছিলেন, ওরা যেন পরীক্ষাটা দিতে পারে। তাই প্রতি হলে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে ট্রেনের শিক্ষার্থীরা আসলে, হলগুলোতে যেন তারা প্রবেশ করতে পারে,’ বলছিলেন অধ্যাপক পাণ্ডে।

ভর্তি পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পর সাধারণ কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশের অনুমতি দেয় না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

‘তবে ৫ মার্চের পরীক্ষায় সেটি শিথিল করা হয়েছিল এবং যারা এসেছে তারা পরীক্ষা দিতে পেরেছে। কেউ এসেছে, কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারেনি- এমন তথ্য আমাদের জানা নেই,’ বলেন অধ্যাপক পাণ্ডে।

শেষ পর্যন্ত কিভাবে গিয়েছিল ট্রেনের পরীক্ষার্থীরা

মঙ্গলবার ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি তিন ঘণ্টা বিলম্বে সোয়া ৯টায় ঢাকা ছেড়ে রওনা হয়। ভেতরে উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থীরা আর বিভিন্ন স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া অন্য যাত্রীরা ছিল। অথচ রাজশাহীতে এর পৌঁছানোর কথা ছিল বেলা ১২টার আগেই।

ট্রেনটি জয়দেবপুর ছাড়ার পর পুরোপুরি পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বে এলে অসীম কুমার তালুকদার পরীক্ষার্থীদের বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে।

এরপর ভিসি ভর্তি কমিটির সাথে সভা করেন এবং একইসাথে রেল কর্মকর্তাদের অগ্রগতি সম্পর্কে বার বার জানাতে নির্দেশনা দেন।

এদিকে ট্রেন এগিয়ে চলছিল। কিন্তু সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌঁছানোর পর সোয়া ৩ ঘণ্টা বিলম্বে রওনা দেয়া ট্রেনটির ইঞ্জিন আবার বিকল হয়ে পড়ে। কর্মকর্তারা তখন আশেপাশে কাছাকাছি কোথায় ভালো ইঞ্জিন আছে কি-না খুঁজতে শুরু করেন।

অসীম কুমার তালুকদার বলছিলেন, ‘ট্রেনের চাকাই জ্যাম হয়ে গিয়েছিল, নড়ানোই যাচ্ছিল না। পরে ঈশ্বরদী থেকে অন্য একটি ট্রেনের ইঞ্জিন এগুতে বললাম। তবে দু’টি ইঞ্জিন নিয়ে ওই লাইনে ব্রিজ থাকায় ট্রেন চালানো যায় না।’

এর মধ্যে কর্মকর্তারা হিসেব করে দেখেন যে ওই অবস্থায় নতুন ইঞ্জিন এনে সেটি জোড়া দিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী পৌঁছালেও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে না শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে চিলাহাটি এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে সেখানে পৌঁছালে সেই ট্রেনের ইঞ্জিন শিক্ষার্থীদের বহনকারী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের সাথে সংযুক্ত করা হয়।

ট্রেনের ভিতরে মাইকিং করে অন্য যাত্রীদের বলা হয়, পরবর্তী স্টেশনে বা একেবারে রাজশাহী গিয়ে নামতে যাতে ট্রেনকে মাঝপথে আর দাঁড়াতে না হয়।

এরপর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গতি বাড়িয়ে বেলা ৩টা ৩৮ মিনিটে ট্রেনটি রাজশাহী পৌঁছায়। সেখানে নেমেই শিক্ষার্থী দ্রুত যার যার পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করে।

‘ট্রেন পৌঁছানোর পর কেউ কেউ তিন-চার মিনিটের মধ্যে হলে এসে পড়ে। কারো কারো হয়তো ১০-১৫ মিনিট লেগেছে। কিন্তু আমাদের জানা মতে এখানে আসার পর কেউ পরীক্ষা মিস করেনি,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন অধ্যাপক প্রবীর কুমার পাণ্ডে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top