আজ অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ও

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার আজিজুল হকের জন্মদিন 

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২০ ০০:০৬; আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২০ ০০:০৯

স্যার মুহাম্মদ আজিজুল হক (২৭ নভেম্বর ১৮৯২–২৩ মার্চ ১৯৪৭)

স্যার মুহাম্মদ আজিজুল হক (২৭ নভেম্বর ১৮৯২ – ২৩ মার্চ ১৯৪৭) ছিলেন একজন বাঙালি আইনজীবী, লেখক ও সরকারি কর্মকর্তা। তিনি অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেন।

তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ ও ইউনিভার্সিটি ল কলেজে লেখাপড়া করেছেন। মুসলিম জনসাধারণ, বিশেষত গ্রামীণ কৃষকদের উন্নয়নের জন্য তিনি কাজ করেছেন। এর ফলে উপমহাদেশের অনেক প্রভাবশালী মুসলিম রাজনীতিবিদদের সাথে তিনি কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন আবুল কাশেম ফজলুল হক, আবদুল্লাহ আল-মামুন সোহরাওয়ার্দী, নবাব সলিমুল্লাহ ও মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ।

আজিজুল হক ১৮৯২ সালের ২৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের শান্তিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন খ্যাতনামা লেখক, কবি ও সাংবাদিক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। আজিজুল হক মেধাবী ছাত্র ছিলেন। শান্তিপুর মুসলিম স্কুলে তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেছেন। ১৯০৭ সালে তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএ পাস করেন এবং পরবর্তীতে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯১৪ সালে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে ১৯১৫ সালে নদীয়ার কৃষ্ণনগর জজ আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। শীঘ্রই তিনি নদীয়া জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হন। ১৯২৬ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত তিনি নদীয়া জেলা বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। সেই বছর তিনি বাংলার আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯২৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো হন। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের সদস্য হন। ১৯২৯ সালে পুনরায় বাংলার আইন পরিষদের সদস্য হন। ১৯৩১ নেহরু রিপোর্টের প্রতিবাদে এ প্লি ফর সেপারেট ইলেক্টরেট ইন বেঙ্গল নামে পুস্তিকা প্রকাশ করেন।

একই বছর তিনি ইন্ডিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজ কমিশনের সদস্য মনোনীত হন। ১৯৩২ সালে তিনি বেঙ্গল ব্যাংকিং ইনকোয়ারি কমিশন, বেঙ্গল রিট্রেঞ্চমেন্ট কমিটি ও বেঙ্গল বোর্ড অব ইকোনমিক ইনকোয়ারির সদস্য হন। এছাড়াও তিনি রেলওয়ে উপদেষ্টা কমিটি ও বাংলার আইন পরিষদের পাবলিক একাউন্টস কমিটিতে কাজ করেছেন। তিনি বেঙ্গল বোর্ড অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

১৯৩৩ সালে তিনি কৃষ্ণনগর পৌরসভার চেয়ারম্যান হন। এক বছর পর ১৯৩৪ সালে তিনি বাংলার শিক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। বিনামূল্যে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার বিল তিনি প্রথম উত্থাপন করেছিলেন। তার মেয়াদে বাংলার শিক্ষাখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তার নির্দেশনায় অনেক নতুন বিদ্যালয় নির্মিত হয় এবং শহর ও গ্রাম এলাকায় স্কুল ব্যবস্থা সংগঠিত করা হয়। মন্ত্রীত্বকালে তিনি রেজিস্ট্রেশন ও ওয়াকফের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি থেকে বাংলায় পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করেছেন।

মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে তিনি শিক্ষা ও খাদ্য বিতরণ বিষয়ক ব্যাপার দেখাশোনা করেছেন। ১৯৩৯ সালে বগুড়ায় তার নামে কলেজ স্থাপিত হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে। কামাল ইয়ার জং শিক্ষা কমিটিতে কাজ করার কারণে তিনি ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ভারতীয় প্রদেশসহ সমগ্র ভারতের মুসলিম শিক্ষার সমস্যা সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। তার প্রতিবেদন ভারতীয় মুসলমানদের সংস্কৃতি ও সামাজিক শৃঙ্খলার সহায়ক শিক্ষার ব্যাপক ভিত্তিক পরিকল্পনা পেশ করা হয়।

আজিজুল হক ১৯৩৭ সালে বাংলার আইন পরিষদের স্পিকার হন। এই পদে তিনি পাঁচবছর ছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন এবং ১৯৪০ সালে পুনরায় এই পদে নিযুক্ত হন। এই দুই পদে তিনি একাধারে চারবছর দায়িত্বপালন করেছেন। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নতুন ইসলামিক স্টাডিজ কারিকুলাম এবং ইসলামিক হিস্ট্রি এন্ড কালচার বিভাগ চালু করেন।

১৯৪২ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। ভারতে ফেরার পর ভাইসরয়ের নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য হন। তিনি বাণিজ্য, শিল্প, বেসামরিক সরবরাহ, খাদ্য বিভাগের দায়িত্ব পান। পরে তাকে সরবরাহ বিভাগের বস্ত্র দপ্তরের দায়িত্বও দেয়া হয়। তিনি লর্ড লিনলিথগো ও লর্ড ওয়াভেল উভয় ভাইসরয়ের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।

আজিজুল হক ১৯২৬ সালে খান বাহাদুর খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি সিআইই হন। ১৯৪১ সালে তিনি নাইট খেতাব লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কেসিএসআই হন। পরবর্তীতে ভাইসরয়ের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের প্রতিবাদের সমর্থনে তিনি সকল খেতাব বর্জন করেন।

আজিজুল হক ১৯৪৭ সালের ২৩ মার্চ মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

আজিজুল হকের রচনাকর্মে‌র মধ্যে রয়েছে:

হিস্ট্রি এন্ড প্রবলেমস অব মুসলিম এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৯১৭)
এডুকেশন এন্ড রিট্রেঞ্চমেন্ট (১৯২৪)
দ্য ম্যান বিহাইন্ড দ্য প্লাউ (১৯৩৯)
দ্য সোর্ড‌ অব দ্য ক্রিসেন্ট মুন
কালচারাল কন্ট্রিবিউশনস অব ইসলাম টু ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি
এ প্লি ফর সেপারেট ইলেক্টোরেট ইন বেঙ্গল (১৯৩১)

তথ্য সূত্র ও ছবি:  ইন্ডিয়ান পত্রিকার  সৌজন্যে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top