বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা, বেশী তালিকা রাবির

কে এ এম সাকিব, রাবি | প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২১ ২১:২৭; আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪১

ফাইল ছবি
ভ্যাকসিনেসন কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে দেশের সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কথা ছিল। তবে কবে, কীভাবে টিকা দেওয়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। ফলে আবারো অনিশ্চিয়তার মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাকসিনেসন এর৷

সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে ১ লাখ ৩ হাজার ১৫২ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া হলেও এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার (২৩ জুন) পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)। টিকা দিতে দেরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলাও দেরি হচ্ছে। অন্যদিকে করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে উদ্ধার পরিকল্পনা (রিকোভারি প্ল্যান) করার জন্য একটি সাধারণ নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এতে শিক্ষাবর্ষের সময় কমানো ও বিভিন্ন ধরনের ছুটি বাতিলসহ ছয়টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদ্ধার পরিকল্পনা করে তা একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে বাস্তবায়ন করবে।

গত ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে৷ সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা থাকলেও আসন্ন ঈদুল আজহার আগে খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলো, আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু করা হবে।সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গত ৩১ মে পর্যন্ত মোট এক লাখের বেশি আবাসিক শিক্ষার্থীর তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসে দেওয়া হয়েছে। করোনার টিকার নিবন্ধনসংক্রান্ত কাজসহ স্বাস্থ্যের তথ্যসংক্রান্ত বিষয়ে জড়িত এমআইএস।

ইউজিসি সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি তালিকা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ হাজার ১৩০, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার ১ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ হাজার ৬৩০ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১ হাজার ৯৮৭ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ হাজার ৫০০ জন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার ৬৬৯ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৫৫৩ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৯০ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৮৪৫ জন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ২১৪ জন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৬৫৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বাকিরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ ছাড়া ৪০ বছরের কম ৪ হাজার ১৩৯ জন শিক্ষক এবং ৮ হাজার ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকাও দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মোট ২২০টি আবাসিক হল রয়েছে। এগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ১৫ হাজার ৫২৪ জন।

১৯ জুন থেকে ৫ লাখ মানুষকে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এই টিকা দেওয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় অন্যান্যের সঙ্গে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসের পরিচালক মিজানুর রহমান গতকাল রাতে বলেন, এসব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার বিষয়ে তাঁরা এখনো মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাননি। নির্দেশনা পাওয়ার পর কাজটি শুরু হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, পর্যাপ্ত টিকা না থাকার কারণেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে দেরি হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে না। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়াই আমাদের অগ্রাধিকার। অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম, সদস্য, ইউজিসি এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু হবে। হল খোলার আগে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু একদিকে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, অন্যদিকে টিকা পাওয়া নিয়েও সংকট তৈরি হওয়ায় তা দেওয়া যায়নি।

ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, যদিও সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষার্থীকেই ভ্যাকসিনেসনে নিয়ে আসার প্ল্যান রয়েছে তবে আবাসিক হলগুলোতে যেহেতু শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে বেশি করে থাকেন, সে জন্য প্রথমে সেসব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে চায় তারা। কারণ হিসেবে তারা বলছে, টিকা ছাড়া আবাসিক হলগুলো খোলা হলে করোনার ঝুঁকি বেশি। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম গতকাল বুধবার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে না। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়াই আমাদের অগ্রাধিকার।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top