নেপথ্যে আ’লীগ নেতা!
রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক কলেজ নিয়ে ষড়যন্ত্র
বিশেষ প্রতিনিধঃ | প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:০৭; আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৪০
প্রায় ৬ দশক আগে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এর নেপথ্যে রাজশাহী মহানগরীর একজন আওয়ামী লীগ নেতা কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে প্রশাসনের নিকট থেকে যথানিয়মে ৩৪ শতক জমি লিজ নিয়ে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় একটি হাসপাতাল। ফলে এটি এখন ‘রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’ নামে পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানের জমি দখল নেয়ার মাধ্যমে এটি ধ্বংসে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকরা। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে তারা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেন। এসব কর্মসূচিতে হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল ধ্বংসে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, রাজশাহীর হোমিও অনুরাগীরা এতে অংশগ্রহণ করে আসছেন।
নেপথ্যে আ’লীগ নেতা
কলেজের একটি সূত্র জানায়, ভারতের একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের ‘স্মৃতি রক্ষা’র বাহানায় পলাতক আওয়ামী লীগের রাজশাহী মহানগরীর একজন স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এই ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ। বর্তমানে তিনি নিজে ‘পলাতক’ থেকেও তার কিছু অনুসারীকে লেলিয়ে দিয়ে কলেজের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগে জানা যায়, ওই আওয়ামী লীগ নেতা এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে হোমিও কলেজে নিয়মিত ক্লাস নেয়ার কথা। কিন্তু সূত্র জানায়, ওই নেতা কলেজ থেকে যথারীতি তার ‘সম্মানী’র অর্থ বাবদ বিপুল অর্থ উত্তোলন করলেও তিনি একদিনও ক্লাস নেননি। দলীয় ক্ষমতার দাপটে তিনি কলেজের দায়িত্বশীলদের তটস্থ রাখতেন। এভাবে ১০ বছর চলার পর নতুন অধ্যক্ষ যোগ দিয়ে সেই ‘সম্মানী’র টাকা নেয়া বন্ধ করে দেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে চিকিৎক ‘ভারতীয়’ চলচ্চিত্রকারের স্মৃতি রক্ষাকে পুঁজি করে কলেজের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করে চলেছেন। জানা গেছে, ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর পর থেকে এই বাধগ্রস্থ করার কাজ জোরদার করা হয়েছে। কখনো চলচ্চিত্র অনুরাগীদের পরিচয়ে আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু যুবক এসে ঠিকাদারকে কাজে বাধা দেয় এবং কোনো কোনো গ্রুপ চাঁদাও দাবি করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
কলেজের অধ্যক্ষের বক্তব্য
কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আনিসুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই বিধি মোতাবেক কলেজের নামে নামজারি ও খারিজ করে জমির ভূমি উন্নয়ন কর ও সিটি কর্পোরেশন ট্যাক্স নিয়মিতভাবে হালসন নাগাদ পরিশোধ করে আসা হচ্ছে। এবিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও বোয়ালিয়া ভূমি অফিস একাধিকবার কলেজের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। পরবর্তীকালে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং যুগোপযোগী ও মান সম্মত শিক্ষা দানের সুবিধার্থে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে কলেজটি নিজস্ব অর্থায়নে চারতলা ভবন তৈরির পরিকল্পনা করে। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে একটি অংশে দুইতলা পর্যন্ত আংশিক নির্মাণ কাজ করতে সক্ষম হয়। তিনি আরো জানান, পুরনো টিনশেডের কাদামাটি গাঁথুনি একটি দেয়াল এবং পার্শ্ববর্তী সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ায় তা নিরাপত্তাজনিত কারণে অপসারণ করে জায়গাটি পরিষ্কার করা হয় ও প্রাচীরটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। তিনি দাবি করেন, ‘এ বিষয়টি কেন্দ্র করে একটি কুচক্রীমহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিলকে তাল বানিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে ধ্বংসের পায়তারা করছে এবং বিভিন্ন অবাস্তব ও অন্যান্য দাবি দাওয়া উত্থাপন করে আসছে।’
সতর্ক থাকার আহ্বান
এবিষয়ে বিশিষ্ট গবেষক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শিক্ষানগরী রাজশাহীর একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এর উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ করার অধিকার কারো নেই। একজন ভারতীয় চলচ্চিত্রকারের স্মৃতি রক্ষার নামে যা কিছু করা হচ্ছে সেগুলো মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ওই চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক কেবল তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেছিলেন, এর বেশি কিছু নয়। রাজশাহীতে কিংবা বাংলাদেশে তাঁর কোনো অবদান নেই। তিনি যা কিছু করেছেন তাতে ভারতের গৌরব বৃদ্ধি পেয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে তার চেয়ে অনেক বড় মাপের চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি ছিল। কিন্তু সেটি রক্ষায় তো কোনো আন্দোলন দেখা যায় না। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নিয়েও বাংলাদেশে বিখ্যাত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের (যেমন, বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদা, ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক প্রমুখ) স্মৃতি রক্ষায় তো তাদের জন্মস্থানে কোনো আন্দোলন হতে দেখা যায় না। মাহবুব সিদ্দিকী মনে করেন, একটি দেশ তাদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশের কতিপয় ‘মাথা বিক্রি’ হওয়া লোককে ব্যবহার করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে বলে মনে হয়। এসব থেকে সকলকে তিনি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: