মিয়ানমারের ৬০ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে এলেন বাংলাদেশে

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:১৯; আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০১

ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মি (এএ) ও রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় বিজিপির ৬০ জন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে বিজিবির কাছে আশ্রয় নিয়েছে।

তাঁদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছে জমা রাখা আছে। বিজিবির ও স্থানীয় একাধিক সূত্র আজ রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আরকান আর্মি (এএ) ও রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় গুলি, মর্টার শেল, বিস্ফোরিত রকেট লাঞ্চারের খোল এপারের ঘরবাড়িতে পড়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এ সময় প্রবীর ধর (৬৫) ও শামসু (৫৫) নামে দুইজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের বাড়ি তুমব্রু ঘোনার পাড়ায়। এই ঘটনায় নিরাপত্তার জন্য ৫টি স্কুল ও ১টি মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে।

নিজের স্কুল পরিদর্শন করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হামিদুল হক রাত ৮টার দিকে বলেন, ‘আমাদের স্কুলে মিয়ানমারের ৬০ জন সৈনিক অস্ত্র নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বিজিপির ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ায় তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়।’

গতকাল শনিবার বিকেলে থেকে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত লাগাতার গোলাগুলি, মর্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লাঞ্চার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তুমব্রুর বিস্তীর্ণ এলাকা। এ সময় তুমব্রুর কোনা পাড়ায় ভুলুর বাড়িতে এসে পড়েছে রকেট লাঞ্চার উড়ে এসে পড়ার কারণে ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্থানীয় প্রবীর ধর গুলিবিদ্ধ হয়। কোন্দারপাড়া, ভাজাবানিয়া, বাইশফাঁড়ি এলাকার লোকজনও নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা বলেন, ‘গতরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলির কারণে ধুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশ পারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ গুম ধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদ্রাসা ৪ ফেব্রুয়ারি একদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুপুরে বান্দরবানের আকাশে বিমানবাহিনীর ফাইটার প্লেন মহড়া দিতে দেখা গেছে।’

আরও জানা গেছে, একের পর এক ঘটনার কারণে স্থানীয়দের অনেকেই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। এখন ভয়ে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। সীমান্ত এলাকার কৃষকেরা তাদের কৃষি জমির ফসল আনতে জমিতে যেতে ভয় পাচ্ছে।

তুমব্রু বাজার সর্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি রুপলা ধর বলেন, ‘একদিকে সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ, অন্যদিকে গুলি ও মর্টারশেল ঘরে এসে পড়ার কারণে রাতে বাসায় থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পাশের এলাকার এক ঘরের চালায় বিস্ফোরিত রকেট লাঞ্চার এসে পড়েছে। অনেকের বাড়ির উঠানে গুলিও এসে পড়েছে, একজনের হাতে গুলি লেগেছে।’

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘রোববার ভোর থেকে সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির কারনে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকাবাসীদেরকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তের স্কুলগুলো আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

মিয়ানমারের ১৪ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে, বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ, ৫ স্কুল বন্ধমিয়ানমারের ১৪ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে, বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ, ৫ স্কুল বন্ধ
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তের পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি, পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্য আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে শোনা যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকী বলেন, ‘৫৮ জন মিয়ানমার সিকিউরিটির গার্ডকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকে আহত। রাত পৌঁনে ৮টা থেকে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। বিজিবি সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে।’




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top