আবহাওয়া আর ফুড পয়জনিংয়ে ডায়ারিয়ার প্রকোপ 

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০২২ ০২:৪৯; আপডেট: ৪ এপ্রিল ২০২২ ০২:৫১

আবহাওয়া পরিবর্তন আর ফুড পয়জনিংয়ের কারণে রাজশাহীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে চলতি মাসের শুরু থেকেই ডায়রিয়া প্রকোপ আকার ধারণ করে। গত কয়েকদিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অতিরিক্ত ডায়রিয়া রোগীর চাপে অনেকেই বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপে কোথাও যেন ধাপ ফেলানোর জায়গা নাই।

গত মার্চ মাসের শুরু থেকে রাজশাহীতে ভ্যাপশা গরম আবহাওয়া বিদ্যমান। হঠাৎ করে আবহাওয়ার পরিবর্তন নগরবাসী শরীরে বিরুপ প্রভাব পড়ে। এ প্রভাব দৃশ্যমান হয় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে। বিশেষত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে হাসপাতালে ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত একমাসে রামেক হাসপাতালে হাজারের কাছাকাছি ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আর গত এক সপ্তাহে ডায়েরিয়ার প্রকোপ আরও বেড়েছে। বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা ব্যপক ভাবে বাড়ার কারণে চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে শত শত ডায়েরিয়া রোগীকে বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে- ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড নেই। কিছু কিছু ওয়ার্ডে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলাদা করে ডায়েরিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে রোগীর সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে আলাদা করে চিকিৎসা দিলেও প্রতিদিন হাসপাতালে যেহারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে হাসপাতালের ওয়ার্ডের শয্যা কিংবা মেঝে ঠাসাঠাসি করেও তাদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেই এখন ডায়েরিয়া রোগীদের জন্য চিকিৎসার একমাত্র ভরসার স্থল। ফলে বারান্দায় ফ্যান না থাকায় ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে।

রামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী- ১ মার্চ ২২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরপর ৬ তারিখ পর্যন্ত যথাক্রমে ২৭, ২৮, ২৬, ২০ ও ২৬ জন রোগী ভর্তি হন। ৭ মার্চ ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩৮ জন হয়। এরপর ১৬ মার্চ পর্যন্ত যথাক্রমে ৩১, ৩৯, ৩৮, ৩৪, ৩০, ৪০, ৪৩, ৪৮ ও ৪৫ জন করে রোগী ভর্তি হন। ১৭ মার্চ একদিনে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি ৫০ জন ছাড়ায়। ১৭ ও ১৮ মার্চ ভর্তি হন ৫২ জন করে রোগী। ১৯ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন যথাক্রমে ৫৮, ৬২, ৫৯, ৭২, ৮০ ও ৮২ জন ভর্তি হন। ২৫ মার্চ রোগী বেড়ে হয় ৯০ জন। এরপর ২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রোজ ভর্তি হন যথাক্রমে ৮৮, ৯৯, ৭৪, ৯৩, ৬১ ও ৭৮ জন। গোটা মার্চ মাসে রামেক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হয় এক হাজার ৬৩৫ জন। আর গতকাল শনিবার হাসপাতালে ডায়েরিয়া আক্রান্ত হয়ে ৭২ জন রোগী ভর্তি হয়। তাদের অধিকাংশের জায়গা হয়েছে বারান্দার মেঝেতে। অনেকেই আবার বারান্দার মেঝেতেও জায়গা না পেয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়েরিায় আক্রান্ত রোগাীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে এবং ছোট ছোট দুই সন্তানের সুরক্ষায় বাড়িতেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শরীরে স্যালাইন পুশ করছেন। এছাড়া ডাবের পানি, স্যালাইন এমনকি এন্টিবায়েটিক ওষুধও খাচ্ছেন।

রামেক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘রাজশাহীতে বেশ কয়েকদিন থেকেই রোদের প্রখরতা তীব্র সেই সাথে ভ্যাপসা গরম। যার কারণে এই অঞ্চলে ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। যদিও ডায়েরিয়া পানিবাহিত রোগ। তারপরও গরম কিংবা ঠাণ্ডার প্রভাবেও ডায়েরিয়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। রাজশাহীতে সেটিই হয়েছে। এজন্য সবাইকে নিজ নিজ পরিবারকে নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী গণমাধ্যমে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল এটি। কিন্তু যে হারে রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন সেই তুলনায় শয্যার সংখ্যা অপ্রাতুল। আর ডায়েরিয়া রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দায় বেড দিয়ে আবার মেঝেতে এসব রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ডায়েরিা রোগীদের চিকিৎসায় তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না।’

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপে নতুন রোগীকে জায়গা দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে১৩৬ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। যাদের মধ্যে অন্তত অর্ধেক রোগী ডায়েরিয়া আক্রান্ত। এদের বয়স ৩ থেকে ৮ বছরের মধ্যে। একদিনেই রামেক হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছেন মোট ৩৯জন। এর মধ্যে ১৪ জনই ডায়েরিয়া আক্রান্ত। এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডে এতো বেশি রোগী যে পা ফেলানো জায়গা নাই। এর মধ্যে অনেকেই ডায়েরিয়া আক্রান্ত। বেশিসংখ্যাক রোগীর কারেণ চিকিৎসাও তেমন ভালো হচ্ছে না। নার্সরা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।’

হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড-১৪ ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীদের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। ওই ওযার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন সামিয়া ইসলাম বলেন, ‘গত সোমবার থেকে রোগী নিয়ে আছি। হঠাৎ পাতলা পায়খানার কারণে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডায়েরিয়া আক্রান্ত তাই হাসাপাতালের সিট দেয়নি। মেঝেতে চকিৎসা নিতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের বাইরে ফ্যানও নাই। গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এ রকমই একটি প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল; যা একেবারে মহামারীর রূপ ধারণ করে। সেটি স্থায়ী হয়েছিল মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top