পুঠিয়ায় বোরো মৌসুমের প্রস্তুতি

কোল্ড ইনজুরি রোধে শুকনা বীজতলায় আগ্রহী চাষিরা

আরিফ সাদাত, পুঠিয়া প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৪৮; আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৫৪

রাজশাহীর পুঠিয়ায় চলতি বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় কৃষকরা ধানের বীজতলা তৈরির কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। দাম ভালো পাওয়ায় অন্যবারের তুলনায় চাষিরা এবার অনেক বেশী জমিতে ধান রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চাষিরা ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলেও ঝামেলা মুক্ত থাকতে অনেকই শুকনা বীজতলায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

কৃষকদের ভাষ্যমতে, বিগত সময়ে বোরো ধানের চারা তৈরির একমাত্র ভরসা ছিল কাদামাটির বীজতলা। তাতে মাত্রারিক্ত ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে বেশীর ভাগ বীজতলা নষ্ট হয়ে চাষিরা ক্ষতির সম্মূখে পড়তেন। অনেক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ বীজতলায় দ্বিতীয় দফায় বীজ বপন করতে হতো। তবে কৃষি কাজে বর্তমানে চাষিরা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করছেন। চারা উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় গত কয়েক বছর যাবত সচেতন চাষিরা স্বল্প পরিসরে আধুনিক ও ঝুঁকিমুক্ত শুকনা বীজতলায় বোরো ধানের চারা উৎপাদন শুরু করেছেন। এতে করে বোরো ধানের বীজতলা গুলো কোল্ড ইনজুরি মুক্ত হয়। অপরদিকে বীজের অংঙ্কুরিত ক্ষমতাও অক্ষুন্ন থাকে অনেক বেশী।

স্থানীয় চাষিরা বলেন, কাদাযুক্ত মাটির চেয়ে শুকনা মাটির বীজতলা তৈরি করতে অল্প জমির প্রয়োজন হয়। আর স্বল্প সময়ে শুকনা বীজতলা থেকে অনেক উন্নতমানের চারা তৈরির সুফল পাচ্ছেন তারা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরের তুলনায় চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৭ একর জমিতে শুকনা বীজতলায় বোরো ধানের চারা তৈরির প্রস্তুতি চলছে। গত কয়েক বছরে শুকনা বীজতলার সুফল পেয়ে অনেক চাষিরা এতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আর এতে করে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক কম।

উপসহকারী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, সাধারনত বেলে দো-আঁশ মাটিতে শুকনা বীজতলা তৈরির জন্য খুবই উপযোগী। মাটিতে চাষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আদ্রতা সম্পন্ন হিসাবে চারার বেড তৈরি করে নিতে হয়। এরপর সামান্য অংকুরিত বীজ গুলো বেডে ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপর শুকনা গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে ধানের বীজ গুলো ঢেকে দিতে হবে। আদ্রতা বজায় রাখতে বীজ বপনের সঙ্গে সঙ্গে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হয়। প্রয়োজনে হালকা স্প্রে-মেশিনের এর মাধ্যমে পানি দেওয়া যেতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ২০/২৫ দিনের মধ্যে ধানের চারা রোপন উপযুক্ত হিসাবে তৈরি করা সম্ভব।

কৃষির পরামর্শ নিতে আসা শিলমাড়িয়া এলাকার রহমান আলী ও ভালুকগাছি এলাকার জাকির হোসেন বলেন, বৈরি আবহাওয়া ও শৈতপ্রবাহে কারণে কাদা মাটিতে ধানের বীজতলা তৈরি করে আমাদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মূক্ষিণ হতে হয়। অনেকের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে গত কয়েক বছর যাবত শুকনা বীজতলায় চারা উৎপাদনের পদ্ধতি এই এলাকায় এক নতুন সম্ভবনার দুয়ার খুলেছে। এখন অল্প খরচে এবং সল্প সময়ে শুকনা বোরো বীজতলায় আশানুরুপ চারা উৎপাদন সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভূঁইয়া বলেন, আগে বৈরি আবহাওয়া ও ঠান্ডা জনিত কারণে অনেক বোরো বীজতলা নষ্ঠ হয়ে যেত। বর্তমানে চাষিরা শুকনা বীজতলায় বেশী আগ্রহী। ইতিমধ্যে উপজেলার অনেক এলাকার কৃষকরা শুকনা বীজতলায় চারা তৈরি শুরু করছেন। এ বিষয়ে কৃষি অফিসের লোকজন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ব্যাপক প্রচারণা এবং সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এনএস



বিষয়: পুঠিয়া


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top