জেনেশুনেই কি ৫ যাত্রীকে 'হত্যা' করেছে টাইটান!

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২৩ ১৪:৫৫; আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ০৪:১৪

ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে জানা গেল। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে যাওয়া পাঁচ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছে। এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। টাইটানিকের মর্মান্তিক স্মৃতি আবার উস্কে দিলো টাইটান নামের মিনি সাবমেরিনটি।

১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল। ১১১ বছর আগে হিমশৈলে ধাক্কা মেরে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় ওই সময়ের অন্যতম বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক। মৃত্যু হয় ১৫০০-রও বেশি মানুষের।

প্রথম যাত্রাতেই ডুবে গিয়েছিল আরএমএস টাইটানিক। জাহাজটি সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের পথে পাড়ি দিয়েছিল প্রথম যাত্রায়। জাহাজের নির্মাতা সংস্থার তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, এই জাহাজের ডুবে যাওয়া ‘অসম্ভব’। কিন্তু তার পরও হিমশৈলের চূড়ায় ধাক্কা মেরে ডুবে যায় জাহাজটি।

সেই গল্পকেই ১৯৯৭ সালে বড় পর্দায় তুলে ধরেছিলেন হলিউডের খ্যাতনামী পরিচালক জেমস ক্যামেরন।

আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে এখনো রয়েছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। সেই ধ্বংসাবশেষ চাক্ষুষ করে এসেছেন ক্যামেরন নিজেও। টাইটানিকের শুটিংয়ের সময় সমুদ্রের তলদেশে ৩৩ বার ডুব দিয়েছিলেন ক্যামেরন।

নিজে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে এলেও টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করেছিলেন ক্যামেরন।

২০১২ সালে সংবাদমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-কে দেয়া একটি সাক্ষাত্কারে ক্যামেরন বলেছিলেন, ‘কেউ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাচ্ছেন মানে তিনি পৃথিবীর অন্যতম বিপদসঙ্কুল জায়গায় যাচ্ছেন।’

ক্যামেরন আরো যোগ করেন, ‘ওখানে গিয়ে বিপদে পড়লে কেউ বাঁচাতে আসবে না। কোনো পুলিশ বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ফোন করে আপনি যে ডেকে পাঠাবেন, সেই উপায় নেই।’

ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, ক্যামেরন নিজে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ অন্বেষণ করতে আটলান্টিকের অতলে ডুব দিয়েছিলেন। আর তা নিয়ে তিনি একটি বইও লেখেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘ওই দৃশ্য চাক্ষুষ করা পৃথিবীর সব জিনিসের থেকে ভালো।’ তবে সমুদ্রের অত নিচে যাওয়া যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা নিয়েও তিনি সম্যক ধারণা দিয়েছিলেন নিজের বইয়ে।

যদিও টাইটান নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি অস্কারজয়ী পরিচালক।

টাইটানে চেপে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে যাওয়া এই অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ‘ওশানগেট এক্সপিডিশন’-এর এক সাবেক কর্তাও। এই ভ্রমণ সংস্থার তরফ থেকেই অভিযানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ডুবোযানটিও এই সংস্থার মালিকানাধীন।

আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের ইঞ্জিনিয়াররা ওশানগেটের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে যৌথভাবে এই ডুবোযান তৈরি করেন।

কিন্তু ২০১৮ সালে সেই প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ওশানগেট কর্তা ডেভিড লোচরিজ। তিনি একটি রিপোর্ট লিখেছিলেন, ‘টাইটান নৌযানটির আরো পরীক্ষার প্রয়োজন। এটি সমুদ্রের গভীরতায় পৌঁছলে যাত্রীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে।’

ডেভিড আরো দাবি করেন, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিকের যে গভীরতায় রয়েছে, সেখানে পৌঁছনো টাইটানের পক্ষে অসম্ভব। তিনি জানিয়েছিলেন, টাইটান আটলান্টিকের সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে রয়েছে। কিন্তু টাইটানের সাড়ে চার হাজার ফুটের বেশি গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই।

ওশানগেটের অভিযান যাত্রীদের ‘চরম বিপদে’ ফেলবে বলেও ডেভিড মন্তব্য করেছিলেন।

ডেভিডের এই বিবৃতির পর ওই বছরই তার বিরুদ্ধে মামলা করে ওশানগেট। তার বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘন এবং পরীক্ষা-সংক্রান্ত গোপন নথি জনসমক্ষে আনার অভিযোগ আনা হয়।

টাইটানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য ডেভিডকে ওশানগেট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

পাল্টা ওশানগেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ডেভিড ইঞ্জিনিয়ার না হওয়া সত্ত্বেও এবং তাকে দায়িত্ব না দেয়া সত্ত্বেও তিনি বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। ডেভিডের সমস্ত অভিযোগ ভুয়া বলেও দাবি করা হয়।

রোববার পাঁচ কোটিপতি যাত্রী নিয়ে আটলান্টিকের অতলে নেমেছিল টাইটান। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জন’স থেকে যাত্রা শুরু করেছিল ডুবোজাহাজটি।

যাত্রা শুরু করার ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর টাইটানের ‘মাদারশিপ’ পোলার প্রিন্সের সাথে তার সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার পর থেকে সেটি নিখোঁজ ছিল।

পর্যটন সংস্থার দাবি, যানটির ভিতরে পাঁচজন যাত্রীর চার দিন চলার মতো অক্সিজেন মজুত ছিল।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top