ইসরাইলের ২, হামাসের ৩ : যে ৫ দাবির কারণে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হচ্ছে না

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২৪ ১০:৪৯; আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ ১৪:৩০

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং গাজায় হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার - ফাইল ছবি

ইসরাইল এবং গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী মুক্তির প্রবল সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত সম্ভবত কোনো সমঝোতা হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতারসহ বিভিন্ন দেশ চেষ্টা চালালেও দু্'পক্ষের মধ্যে সমঝোতার আলামত দেখা যাচ্ছে না।

রমজানের আগে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার সম্ভাবনার কথা খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন। কিন্তু তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জোর দিয়ে বলছেন, তারা মাত্র ছয় সপ্তাহের অস্ত্রবিরতি চান। ইসরাইলের দাবিও এটা। এর ব্যাখ্যা অনেকে এভাবে করছেন যে রোজার সময় হত্যা বন্ধ থাকবে, তারপর আবার নির্বিচারে চলবে। এমনটা গ্রহণযোগ্য নয়।

গত রোববার ইসরাইল ও হামাসের প্রতিনিধিদলকে মিসরের রাজধানীতে আহ্বান করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, এখানেই সমঝোতা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইসরাইল তাদের প্রতিনিধিদল পাঠায়নি।

ইসরাইল জানিয়েছে, হামাস তাদের দুটি দাবির প্রতি সাড়া না দেয়ায় তারা অস্ত্রবিরতি চুক্তির জন্য প্রতিনিধিদল কায়রো পাঠাচ্ছে না। তবে হামাসের প্রতিনিধিদল কায়রো গেছে।

ইসরাইলের ওই দুই দাবি হচ্ছে 

১. হামাসের হাতে থাকা পণবন্দীদের তালিকা। আর তাদের মধ্যে কতজন জীবিত আছেন এবং কতজন মারা গেছেন।

২. হামাসের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে আটক কতজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হবে, তা জানানো।

আর হামাসের প্রধান তিনটি দাবি হচ্ছে
১. স্থায়ী যুদ্ধবিরতি।

২. গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সৈন্য প্রত্যাহার।

৩. গাজা উপত্যকার উত্তর অংশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে দক্ষিণে আশ্রয় গ্রহণ করা লোকজনকে তাদের বাড়িঘরে ফিরতে দেয়া।

হামাসের এই প্রধান তিন দাবির কোনোটিই ইসরাইল মেনে নিচ্ছে না।

ইসরাইল শর্তাবলী মেনে নিলে ‘২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে’ গাজা যুদ্ধবিরতি সম্ভব : হামাস

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা গ্রুপ হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রোববার এএফপি’কে বলেছেন, চলমান শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে ইসরাইল ফিলিস্তিনি গ্রুপের দাবি মেনে নিলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা যেতে পারে।

স্পর্শকাতর এ আলোচনার ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইসরাইল হামাসের দাবির ব্যাপারে সম্মত হলে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি চুক্তির (যুদ্ধবিরতি) পথ প্রশস্ত হবে।’

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০,৩২০ জনে

গাজা উপত্যকার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বলেছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধা এবং ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধে অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০,৩২০ জন নিহত হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৯২ জন নিহত হওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে মোট ৩০,৩২০ জনে দাঁড়ালো।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় মোট ৭১,৫৩৩ জন আহত হয়েছে।

গাজায় ‘দুর্ভিক্ষ প্রায় অনিবার্য’: জাতিসঙ্ঘ

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে কোন পরিবর্তন না এলে ‘গাজায় দুর্ভিক্ষ প্রায় অনিবার্য।’ জাতিসঙ্ঘ শুক্রবার এ কথা বলেছে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় যে ইসরাইলি আগ্রাসন চলছে তাতে সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও জাতিসঙ্ঘসহ অন্যান্য মানবিক কর্তৃপক্ষ গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেনি।

এ প্রসঙ্গে জাতিসঙ্ঘ মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ’র মুখপাত্র জেন্স লার্কে বলেছেন, একবার দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হলে তা অনেকের জন্যেই অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমরা সেই পরিস্থিতি চাই না এবং তার আগেই পরিস্থিতি উন্নতি করতে চাই।

মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজার ২২ লাখ লোকের জন্যে সেখানকার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।

লার্কে বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এবং বর্তমানের একই ধারায় চলতে থাকলে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যাবে না।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সোমালিয়ায় যখন আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয় তখন মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই না খেয়ে মারা গেছে।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমিয়ার বলেছেন, হামাস নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে গাজায় ১০ শিশুর মৃত্যু সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয়েছে। এরা ক্ষুধায় মারা গেছে।

সূত্র : আল জাজিরা, সিএনএন, টাইমস অব ইসরাইল এবং অন্যান্য



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top