আদালত অবমাননায় বিচারকের জেল, তিন ঘণ্টার মধ্যে জামিন ও পরে রায় স্থগিত

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ১০:১৮; আপডেট: ২ মে ২০২৪ ২৩:১৫

ছবি: প্রতীকী

রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধারের মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপর ছিল হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ। ঐ স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন কুমিল্লার তত্কালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা (বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত)। এ বিষয়ে তাকে তলব করে ব্যাখ্যা চায় হাইকোর্ট। ঐ ব্যাখ্যা যথাযথ না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে। রুল জারির পর সশরীরে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান অর্ধস্তন আদালতের এই বিচারক। কিন্তু ক্ষমার সেই আবেদন গ্রহণ না করে তাকে এক মাসের জেল এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।

রায়ের পর দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন যান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে। তিনি বলেন, যেহেতু এক মাসের সাজা সেহেতুে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬(২)(১) ধারা অনুযায়ী দণ্ডিত বিচারকের জামিন বিবেচনা করার সুযোগ আদালতের রয়েছে। তখন হাইকোর্ট বলে, ‘আবেদন দিতে বলুন, আমরা দেখব। বেলা ২টায় আপিল করার শর্তে জামিনের আবেদন করেন ঐ বিচারক। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আপিলের শর্তে তাকে এক মাসের জামিন দেন। জামিন পাওয়ার পরই সাজার রায় স্থগিত চাওয়া হয়। আবেদনে বলা হয়, নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পরেও ক্ষমা না করে সাজা দিয়েছে আদালত। উনি একজন বিচারক। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। সাজার রায় স্থগিতের আবেদন করছি’। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সাজার রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। ঐ দিন স্থগিত আবেদনটি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হবে। বিচারকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।

যে মামলা ও আদেশকে ঘিরে এত কিছু
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা ও অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের পাঁচটি ভিওআইপি মেশিন ও বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের ৪৮০টি সিম উদ্ধারের ঘটনায় ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়। মো. মামুন চৌধুরী ও রীমা আক্তারকে আসামি করা হয়। মামুনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর মামলার কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করে হাইকোর্ট। ২০১৯ সালের ৬ মার্চ ঐ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ বজায় থাকার আদেশ দেওয়া হয়।

স্থগিতাদেশ থাকার পরেও গত ১০ এপ্রিল মামুন ও রীমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা। আদেশে বলা হয়, আসামির কৌঁসুলি স্থগিতাদেশের বিষয়ে হাইকোর্টের কোনো আদেশ বা তথ্য সরবরাহ করেনি। মামলার এজাহার, জব্দ তালিকাও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজাদি পর্যালোচনা করে আসামিদের বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৫(২)/৫৫(৭)/৭৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হলো।

হাইকোর্টের ওপর দোষ চাপান সোহেল রানা
স্থগিতাদেশ থাকার পরেও বিচারকাজ পরিচালনা করায় বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসামি পক্ষ। হাইকোর্ট গত ১৪ আগস্ট এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে তলব করেন। ২১ আগস্ট হাজির হয়ে ঐ বিচারক লিখিত ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেন, বিচারক তার ব্যাখ্যায় বলেছেন- “স্থগিতাদেশ থাকায় মূল মামলার কার্যক্রম অগ্রসর করার সুযোগ বিচারিক আদালতের না থাকলেও হাইকোর্টের এখতিয়ার ও সুযোগ রয়েছে ঐ বিবিধ মামলায় মূল মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেওয়ার।”

এই ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছে, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে ঐ বিচারক পরোক্ষভাবে হাইকোর্টের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। দাখিলকৃত ব্যাখ্যা মনে হচ্ছে হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না করে অলস বসে রয়েছেন। এতে প্রতীয়মান হয় অধস্তন আদালতের বিচারকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে পারছে না বাংলাদেশ জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট।

লুঘু পাপে গুরুদণ্ড না দেওয়ার আর্জি
গত ২৮ আগস্ট বিচারকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়। এরপর ৩১ আগস্ট সোহেল রানা আরেক আদেশ দিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন আদেশ প্রত্যাহার করে নেন। আদেশে তিনি বলেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ কার্যকর রয়েছে। ফলে অভিযোগ গঠন করা হলেও তা কার্যকর করার আইনগত কোনো সুযোগ নাই। ভুল ও অসাবধানতাবশত করা অভিযোগ গঠন আদেশটি বাতিল করা হলো।

এর পরই আদালত অবমাননার মামলায় তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান। ক্ষমার আবেদনে বলেন, একজন বিচারক হিসেবে হাইকোর্টের আদেশ অগ্রাহ্য বা হেয় করার ন্যূনতম সুযোগ নাই। হাইকোর্টের অসন্তুষ্টি সৃষ্টিকারী সব ভুলের জন্য আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যক্রম গ্রহণ করে লুঘু পাপে গুরুদণ্ড না দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের কাছে অনুকম্পা চাচ্ছি। আদালত ক্ষমার এই আবেদন গ্রহণ না করে ঐ বিচারককে এক মাসের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। রায় প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে তাকে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে দণ্ডিত বিচারকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার রায় স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top