শোষণমূলক নীতিমালা বাতিলের দাবি

লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে বিএডিসি শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২৫ ১৮:১০; আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৫ ২১:৫৩

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) অনিয়মিত শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন। শ্রমিকদের অভিযোগ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ প্রায় ছয় বছর ধরে তা কার্যকর করছে না। বরং সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় প্রণীত নতুন নীতিমালার আওতায় এনে তাঁদের মাত্র ২২ দিনের মজুরি গ্রহণে বাধ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, এটি শ্রমিক শোষণ ও প্রতারণার এক চরম উদাহরণ।
ফেডারেশনের উদ্যোগে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে বিএডিসি রাজশাহী কার্যালয়ের সামনে কয়েকশ শ্রমিক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে অংশ নেন। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন অনিয়মিত শ্রমিক তাহারাজ আলী, শরিফুল ইসলাম নবাব, মিজানুর রহমান, আরিফুল ইসলাম, জিলানি জিয়ারুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলামসহ অনেকে।

ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল হক ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ছারোয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৭ আগস্ট সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১৮ আগস্ট থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিএডিসির প্রধান কার্যালয়সহ সব খামার ও দপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।

শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, ২০১৭ সালে প্রণীত “কৃষি ফার্ম শ্রমিক নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা” অনুযায়ী স্থায়ী করার সুযোগ থাকলেও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ তা কার্যকর করেনি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কৃষি মন্ত্রণালয়ও অনিয়মিত শ্রমিকদের স্থায়ী করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশনা গত ছয় বছর ধরে উপেক্ষিত হয়েছে। এর পরিবর্তে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয় একটি নতুন নীতিমালা— “দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিতকরণ নীতিমালা, ২০২৫” জারি করে। ফেডারেশনের দাবি, এই নীতিমালা কেবল জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য নিয়োগকৃত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথচ বিএডিসি কর্তৃপক্ষ এই নীতিমালার অপব্যাখ্যা করে স্থায়ী প্রকৃতির কাজে নিয়োজিত হাজারো শ্রমিককে এর আওতায় নিয়ে আসতে চাইছে। ফলে শ্রমিকদের মাসিক আয়ের পরিবর্তে তাঁদের মাত্র ২২ দিনের মজুরি নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহীর অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ, সেচসহ নানা ধরনের কাজ করছি। অথচ আজ আমাদের সাময়িক শ্রমিক বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা শুধু অন্যায় নয়, আমাদের সঙ্গে প্রতারণাও।”

ফেডারেশনের নেতারা জানান, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। গত ২৫ মে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন, ২৯ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ এবং সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টো বিভিন্ন খামারে শ্রমিকদের নতুন নীতিমালার অধীনে মজুরি নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ছারোয়ার বলেন, “আমরা আলোচনার পথ খোলা রেখেছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবিকে অগ্রাহ্য করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট আদেশ থাকা সত্ত্বেও কেন শ্রমিকদের স্থায়ী করা হচ্ছে না, আর কেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে—এর জবাব আমাদের পেতেই হবে।” ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে ফেডারেশন দেশের সব ইউনিটকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে ব্যানার টানানো, স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা এবং কর্মসূচি শুরুর আগে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লিখিতভাবে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছে। সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিএডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top