৪০টি ব্যাংক হিসাব ও ১৭৮ শতাংশ জমিসহ

ক্যাশিয়ার এখলাস’র অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত

মহিব্বুল আরেফিন | প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২১ ০৫:০৩; আপডেট: ২ মার্চ ২০২১ ০৫:০৮

ফাইল ছবি

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সাবেক ক্যাশিয়ার এখলাস উদ্দিনের অন্তত: অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত তালিকায় রয়েছে ৪০টি ব্যাংক হিসাব এবং দুটি বাড়ী, প্লটসহ মোট ১৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ জমি।

রাজশাহী নগরীর শাহ্মখদুম থানায় ২০১১ সালের ২১ নভেম্বরে দায়েরকৃত (উদ্ভূত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ) মামলায়-০১/২০১৩ মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কার্যালয় এ আদেশ দেন। আদেশটি কার্যকর করতে আদালত ইতোমধ্যে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পত্র প্রেরণ করেছে।
তথ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) টাকা আত্মসাতকারী বহুল আলোচিত সাবেক ক্যাশিয়ার এখলাস উদ্দিন চেকের টাকার অংক পরিবর্তন করে সাড়ে ৭ কোটি টাকা আত্মসাত করেন। আরেক ঘটনায়, এখলাস ভুয়া ব্যবসায়ী সেজে নিজ নামে ৮ কোটি ২২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮ টাকা ব্যাংকে জমা রাখেন।

এছাড়া, ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ক্যাশিয়ার পদে চাকরিতে থাকাকালে এখলাস উদ্দিন নিজ নামে বিভিন্ন একাউন্টে প্রায় ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫৮৬ টাকা জমা করেন। যেগুলি এখলাসের পরিবারের ৬ সদস্যের নামে ৯ ব্যাংকে ৩১টি হিসাব খোলা হয় এবং শুধু এখলাসের নিজ নামেই ছিল ২১টি ব্যাংক একাউন্ট।

২০১১ সালের ১১ জুলাই আরডিএ শাহ্ মখদুম থানায় দুর্নীতির মাধ্যমে ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে এখলাস উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এ দুর্নীতি খবর ফাঁস হলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এসময় আত্মগোপনে চলে যান এখলাস উদ্দীন। পরে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এখলাস একই বছরের ৩ মার্চ আরডিএ কর্তৃপক্ষকে ২ কোটি টাকা ফেরত দেন। এসময় মাত্র ৯ হাজার ৪৩৫ টাকা বেতনের একজন কর্মচারী ২স্ত্রী ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে এতো বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যাওয়া নিয়ে খোদ আরডিএ’র সার্বিক দুর্নীতিকে দায়ী করে নগরবাসী।

এদিকে সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র রাজশাহী নগরীর শাহ্মখদুম থানায় ২০১১ সালের ২১ নভেম্বরে দায়েরকৃত (উদ্ভূত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ) মামলায় (নং-০১/২০১৩) এখলাস উদ্দীন এবং তার সহযোগী মোসা: নাসরিন, মো. আরিফুল ইসলাম এবং সোহানা পারভীনের ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত করা হয়। এছাড়া একই মামলায় শুধুমাত্র এখলাস উদ্দীনের নামের দুটি বাড়ী, প্লটসহ মোট ১৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

সূত্র থেকে জানা গেছে, এখলাস উদ্দীনের নিজ নামে ন্যাশনাল ক্রেডিট এন্ড কমার্স ব্যাংক রাজশাহী শাখায় ৩টি এফডিআরসহ মোট ৬টি হিসাব, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১টি এফএমডিসহ মোট ৩টি হিসাব, আইএফসি ব্যাংকে ১টি হিসাব, ডাচবাংলা ব্যাংকে ১টি হিসাব, রুপালী ব্যাংকে ১টি হিসাব, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে ৪টি হিসাব, সিটি ব্যাংকে ৩টি হিসাব, যমুনা ব্যাংকে ১টি হিসাব এবং মোসা: নাসরিন এর নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে এফডিআরসহ মোট ৭টি হিসাব, একই ব্যাংকে মো. আরিফুল ইসলামের নামে এফডিআরসহ ৮টি হিসাব এবং সোহানা পারভীন মার্কেন্টাইল ব্যাংক সাত মসজিদ রোড শাখার ১টি হিসাবসহ সর্বমোট ৪০টি হিসাব জব্দ করা হয়।

যার মধ্যে রয়েছে এফডিআর, চলতি, সঞ্চয়ী, পাওয়ার, মাসিক মুনাফা, এফএমডি হিসাব রয়েছে। উল্লেখ্য, এখলাস উদ্দীনের বাজেয়াপ্ত সকল ব্যাংক হিসাব গুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় খোলা হয়।
অপর দিকে, নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ডের কাদিরগজ্ঞ এলাকার ৩ দশমিক ৩০ শতাংশের (হোল্ডিং নং-৪৪৯) উপর নির্মিত একটি বাড়ি, একই এলাকার ১.৬৫ শতাংশের উপর নির্মিত অপর একটি বাড়ি এবং নগরীর চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার ৩ কাঠার প্লটসহ কমুড়ো পুকুর-৯৭, বাগসাড়া ও ঘিপাড়া মৌজা এলাকার জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

এদিকে তথ্য উপাত্ব্য বিশ্লেষনে দেখা গেছে, অবৈধ্যভাবে এখলাস উদ্দীনের অর্জিত সম্পদের বর্তমান মূল্য অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সঠিক বাজার যাচাই-বাছায়ের মাধ্যমেই প্রকৃত মূল্য বোঝা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মতামত ব্যক্ত করছেন।
 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top