বাবা দিবস
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২২ ০৭:৫১; আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৮
‘তিনি বৃদ্ধ হলেন...বৃদ্ধ হলেন.../ বনস্পতির ছায়া দিলেন সারা জীবন!/ এই বুড়ো গাছের পাতায় পাতায়/ সবুজ কিন্তু আজও মাতায় সুঠাম ডালে...।’ কণ্ঠশিল্পী কবীর সুমন বাবাকে নিয়ে লিখেছিলেন এই জনপ্রিয় গানটি।
প্রবাদ রয়েছে :‘পৃথিবীতে কীভাবে বাঁচতে হয় বাবা তা বলেন না, তিনি সারা জীবন পরিবার, সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকেন। আর সন্তানদের দেখার সুযোগ করে দেন—কীভাবে বাঁচতে হয়।’ পৃথিবীতে চোখ মেলে মাকে আঁকড়ে ধরেই বেড়ে ওঠে একটি শিশু। মায়ের স্নেহছায়ায় বড় হয় সন্তান। বাবা যেন দূরবর্তী দ্বীপের মতো।
এ অঞ্চলের প্রচলিত আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় পুরো সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকেন পরিবারের ঘেরাটোপের বাইরে। তার সান্নিধ্য খুব কমই পায় সন্তানরা।
বাবার অস্তিত্ব সন্তানের উপলব্ধিতে আসে ধীরে ধীরে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। তখন বোঝা যায়, বাবার কাঁধে ভর করেই বেড়ে উঠছে সন্তানেরা। বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ বলেছেন, ‘নিজের অস্তিত্বে বাবার অবয়ব ফুটে উঠতে থাকে বলেই মানুষ ক্রমশ বড় হতে থাকে।’
আজ বাবা দিবস । এ দিবসে সকল বাবাদের জানাই শ্রদ্ধা ।
বাবা
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
বাবা বললেন,
অন্ধকারে একটুখানি দাঁড়িয়ে থাক আমার জন্য
মাটির তলার একটা সুড়ঙ্গে নেমে গেলেন
খুব আস্তে আস্তে
আকাশে প্রান্ত নির্ণয় ভুল করে ছুটে গেল একটা উল্কা
বন্দরে একটাও জাহাজ নেই, রাস্তাগুলো দুলে ওঠে
কী যে হল
বুঝতে বুঝতেই কেটে গেল আরও উনিশটা বছর
এর মধ্যে কত হুড়োহুড়ি, কত মধুলোভীদের সঙ্গে ঘুরপাক
বাবা, বাবা!
বোতাম বোতাম মাশরুম খুব ইচ্ছে করে
বাবাকে খাওয়াতে
আর রুমালি রুটি
অন্তত একবার কাস্পিয়ান হ্রদের মাছের ডিম
ইচ্ছে করে একটা বারান্দাওয়ালা ঘর উপহার দিতে
বাবার থেকে এখন আমি বয়েসে অনেক বড়
আমার একুশটা হাত
তিনটে চোখ
প্রতিদিন সাতশো দরজা পেরিয়ে যাই
শ্যামপুকুর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আমার অল্পবয়েসি বাবা
বলে উঠি, সাবধানে যাও, গাড়ি চাপা পড়বে যে
ফুটপাথে ওঠো
পাঞ্জাবিতে বগলের নীচে ফুটো, আমার পাঞ্জাবি
লাগবে না বাবার গায়
একটাও দশতলা বাড়ি দেখেননি, আমি সেখানে থাকি
জেনে গেলেন না বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশ হয়েছে
তাঁর জন্মস্থান ঘিরেৃ
আমার ছেলে ঠাকুমার পাশে শুয়ে গল্প শোনে
ঘুম পাড়ানি গল্প
ঐ সব গল্প কিছুদিনের মধ্যেই শরীরে আঁট হয়ে যায়
নতুন নতুন গল্প বানাতে ছেলের দল হৈ হৈ করে ছুটছে
বিমানে একটা বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে আকাশে
আমি
যতদিন বাবার ছেলে ছিলাম
তার চেয়ে বেশিদিন নিজেই বাবা
আমার বুকের সব রোম পাকা, সকালবেলা কাশতে কাশতে
লক্ষ করি, রক্ত পড়ছে কিনা
বাবা ছবি হয়ে থেমে আছেন।
নিজের থেকে কমবয়েসি কারুকে কি বাবা বলে ডাকা যায়?
তবু দেখতে পাই মাঝে মাঝে
আমিই চেয়ে থাকি স্নেহের দৃষ্টিতে
তাঁর ঘামে ভেজা মুখ, পরিক্রমা ক্লান্ত পা
কিছু দিতে ইচ্ছে হয়, যা যা পাননি
আমার ছেলের কাছ থেকে কিছু নেবার আগের মুহূর্তে
একবার আমার হাত কাঁপে!
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: