এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৬৭৩ টাকা!

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০২২ ২০:২১; আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ১৯:৫৬

ছবি: সংগৃহিত

স্বল্প উৎপাদনে লোকসান গুনতে হচ্ছে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের। বিদ্যুৎ বিক্রির তুলনায় উৎপাদন খরচের অনেক ফারাক। ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৬৭৩ টাকা। খবর শেয়ার বিজের।

ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট রিপাওয়ারিং তথা সংস্কার শুরু হয় ২০২০ সালে। চলতি বছর এর কাজ শেষ হয়েছে। গত অর্থবছর কেন্দ্রটি প্রায় পুরো সময় বন্ধ ছিল। এতে নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় কেন্দ্রটিতে। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ে ৬৭৩ টাকা। অথচ এ বিদ্যুৎ বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র পাঁচ টাকা দরে। এতে ওই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।

তথ্যমতে, ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট কেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা ২৬০ মেগাওয়াট। এতে কেন্দ্রটিতে বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে ১৮২ কোটি ২০ লাখ ইউনিট। তবে গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ দুই হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ। আর কেন্দ্রটির জন্য গত অর্থবছর ব্যয় হয়েছে ৩০৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ৬৭৩ টাকা ৪৭ পয়সা।

এদিকে সন্দ্বীপ গ্যাস টারবাইন কেন্দ্রটির সক্ষমতার মাত্র এক শতাংশ ব্যবহার হয় গত অর্থবছর। ডিজেলচালিত ২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি বাকি সময় বন্ধই ছিল। দ্বীপের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য সন্ধ্যা থেকে রাতের কিছুটা সময় চালানো হয় এ কেন্দ্রটি। ফলে ওই কেন্দ্রে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১০ লাখ ৪৩ হাজার ইউনিট। আর কেন্দ্রটির জন্য পিডিবির ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ১৮০ টাকা ৫৯ পয়সা।

একই অবস্থা রংপুর গ্যাস টারবাইন কেন্দ্রটির। ডিজেলচালিত ২০ মেগাওয়াট এ কেন্দ্রটি গত অর্থবছর সক্ষমতার মাত্র এক শতাংশের কিছু বেশি ব্যবহার করা হয়। এতে ওই কেন্দ্রে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১৬ লাখ ৭২ হাজার ইউনিট। কেন্দ্রটির জন্য পিডিবির ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ৯৫ টাকা ৬২ পয়সা।

অন্যদিকে গোপালগঞ্জ পিকিং পাওয়ার প্লান্টটির সক্ষমতার মাত্র দুই শতাংশ গত অর্থবছর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ফার্নেস অয়েলচালিত ১০০ মেগাওয়াট এ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এক কোটি ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ইউনিট। আর কেন্দ্রটির জন্য পিডিবির ব্যয় হয়েছে ৮৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ৪৮ টাকার বেশি।

এর বাইরে পিডিবির মালিকানাধীন ১৪ কেন্দ্রে নানা কারণে গত অর্থবছর কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়নি। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ছয়টি কেন্দ্রে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ এনে মেশিনারিজ চালু রাখতে হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ঠিকই ছিল। কিছু অর্থ ব্যয় হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণেও। ফলে এসব কেন্দ্রে পিডিবির গত অর্থবছর প্রায় ৪২০ কোটি টাকা গচ্চা গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোনাগাজী বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। উল্টো সাড়ে তিন হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ বাইরে থেকে আনতে হয়েছে। ৯০০ কিলোওয়াট এ কেন্দ্রটির জন্য পিডিবির গচ্চা গেছে এক কোটি ছয় লাখ টাকা। আর সিরাজগঞ্জ বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ আনতে হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ইউনিট। দুই মেগাওয়াট সক্ষমতার এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা।

একইভাবে টঙ্গী পাওয়ার স্টেশনে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ আনতে হয়েছে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার ইউনিট। ১০৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ৩৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সিদ্ধিরগঞ্জ ১১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিতে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ আনতে হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৭৯ হাজার ইউনিট। এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

ভেড়ামারা পাওয়ার স্টেশনে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ আনতে হয়েছে প্রায় এক লাখ এক হাজার ইউনিট। এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ২২ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর বরিশাল গ্যাস টারবাইন কেন্দ্রটিতে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ আনতে হয়েছে প্রায় এক লাখ ৭৮ হাজার ইউনিট। এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এদিকে ঘোড়াশাল প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল গত অর্থবছর। এ কেন্দ্রে পিডিবির গচ্চা গেছে ৩৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। একইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল খুলনা পাওয়ার স্টেশনে। এ কেন্দ্রের জন্য পিডিবির ব্যয় হয়েছে ১৯৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়া ভোলা ডিজেল পাওয়ার স্টেশনে গচ্চা গেছে এক কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও শিকলবাহা পাওয়ার স্টেশনে ১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

মূল খবরের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top