মহামারী পরিস্থিতিই দায়ী বিশেষজ্ঞদের

বাড়ছে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের হার

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৩৩; আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৩৪

ফাইল ছবি

ব্যাংকের উপর দিন দিন কমে আসছে গ্রাহকদের আস্থা। ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে নিজের কাছেই টাকা রাখছেন গ্রাহকরা। গত জুন-জুলাই এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা, যা নজিরবিহীন। শুধু তা-ই নয়, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের হার বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি।

গ্রাহকদের ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের হার বাড়ায় ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকের বাইরে এ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। অথচ জুনেও ব্যাংকের বাইরে টাকা ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। এর ফলে ব্যাংক খাতের চাহিদা (ডিমান্ড ডিপোজিট) আমানত কমে আসছে। এক মাসের ব্যবধানে ডিমান্ড ডিপোজিট কমেছে ৫ শতাংশ। তবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের মেয়াদি আমানত কিছুটা বেড়েছে, যা জুনে ছিল ১১ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। সেটি জুলাই শেষে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৯৩ হাজার কোটিতে।

টাকা উত্তোলনের হার বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতে সঞ্চয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একদিকে অব্যাহত অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থা কমছে, অন্যদিকে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে যে কোনো সময় নগদ টাকার প্রয়োজন হতে পারে ভেবে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নিজের হাতে রেখে দিচ্ছে। আবার এই করোনা মহামারীতে মানুষের রোজগার কমে গেলেও ব্যয় বেড়েছে। ফলে নিজেদের চাহিদা ও প্রয়োজন মেটাতে আমানত তুলে নেওয়ার পাশাপাশি অনেকেই তাদের সঞ্চয়ও ভেঙে ফেলছেন। এতে ব্যাংকের ডিপোজিট কমে আসছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে ডিপোজিটের হার ৩০ শতাংশ কমে গেছে। শুধু এক মাসে, অর্থাৎ চলতি বছরের জুন-জুলাই ব্যবধানে ব্যাংক খাতের ডিপোজিট কমেছে ১৯ শতাংশের বেশি।

তবে ব্যাংক খাত থেকে গ্রাহকদের আস্থা কমানোর পক্ষে নয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগস্টে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। এ ছাড়া কোভিড-১৯-এর কারণে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ কিছুটা বেড়েছে। ফলে ওই সময় ব্যাংক থেকে মানুষ টাকা কিছুটা বেশি তুলেছে। কিন্তু মেয়াদি আমানত তো বেড়েছে।

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপে বেকারত্ব বৃদ্ধি ও ব্যবসায় মন্দ এই দুটি কারণে মানুষের জীবনযাত্রা নির্বাহে কষ্ট বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ টাকা ব্যাংকে না জমিয়ে উল্টো ব্যাংক থেকে তুলে নিচ্ছেন। এর ফলে এক মাসের ব্যবধানে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। একইভাবে গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত সময়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আর ছয় মাসের ব্যবধানে এর পরিমাণ ৩৫-৪০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের আমানত ও সঞ্চয়ের পরিমাণও কমছে দ্রুতগতিতে। শুধু জুন-জুলাই এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের ডিপোজিট কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। তবে এ সময়ে দীর্ঘমেয়াদি আমানত বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

ব্যাংক খাতের এই অবস্থার পেছনে একই কথা শোনালেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, করোনা মহামারীতে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়ে নতুন করে বেকার হয়েছে। বিশ্ব শ্রম সংস্থাও (আইএলও) বলছে, প্রতি চারজনে একজন মানুষ এখন বেকার। ফলে মানুষ সঞ্চয় ভেঙে জীবন ধারণ করছেন। আবার কেউ কেউ তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতেও ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রাখছেন। ফলে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ কমছে। এ পরিস্থিতি কতটা দীর্ঘায়িত তা আগে বোঝা না গেলেও এখন সবাই বুঝতে পারছে, কোভিড-১৯ সংকট শিগগিরই কাটছে না। ফলে মানুষের কিছু চাহিদা নতুন করে বেড়েছে, যেমন স্বাস্থ্য পরিচর্যা, খাবারের মেনুতে পরিবর্তন, চিকিৎসা ইত্যাদি। কিন্তু আয় তো থেমে গেছে। এজন্য মানুষকে বাধ্য হয়ে ব্যাংকে থাকা টাকা তুলে নিচ্ছে।

মহামারী পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুরাবস্থাকে এর পেছনে দায়ী করে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কোভিড-১৯ একটা বহুমাত্রিক সংকট। এমন সংকট মানুষ আগে কখনো মোকাবিলা করেনি। এ ছাড়া সব শ্রেণির মানুষই কমবেশি আক্রান্ত। মানুষের আয়-রোজগারেও একটা প্রভাব পড়েছে। কিন্তু জীবন ধারণের খরচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়ে গেছে। এর ফলে মানুষ একদিকে নতুন করে ডিপোজিট রাখতে পারছেন না, অন্যদিকে আগের রাখা ডিপোজিটের অর্থ অনেকেই তুল নিচ্ছেন। খবর-যুগান্তর

  • এসএইচ

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top