কেন এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়?

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৪৭; আপডেট: ১২ মে ২০২৪ ০৬:২১

ফাইল ছবি

দেশে ঘটে গেল বড় ধরণের বিদ্যুৎ বিপর্যয়। ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় গত মঙ্গলবার ব্ল্যাকআউট ছিল দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা। এমন বিপর্যয়ের এখনো কূল কিনারা পাওয়া যায় নি। খবর মানবজমিনের।

ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে রাজধানী ঢাকায়। নানা চেষ্টায় মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। এখন চলছে এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান। কাজ করছে তদন্ত কমিটি। এখন পর্যন্ত কেন এই ঘটনা ঘটেছে তার কোনো কারণ জানাতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সাইবার থ্রেড অথবা অপারেশনাল এরর-এর কারণে এ ধরনের গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবারের ঘটনার পেছনে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল না। সাইবার থ্রেটের বিষয়েও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

তার মানে এখানে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণেই এমন পরিস্থিতি হয়েছে। আর সেটি হলে সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের দায় নিতে হবে। কি কারণে জাতীয় গ্রিডের বিপর্যয় হতে পারে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হতে পারে দুটি। প্রথমত, অবহেলা। সাধারণ তিন মাস পরপর সঞ্চালন লাইনে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। এর আগে যাতে খারাপ না হয় সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা। এখন রক্ষণাবেক্ষণে নজর কম। তিনি বলেন, বিদ্যুতের সঞ্চালন ব্যবস্থায় অর্থ কম। কমিশন কম। তাই এদিকে নজরও নেই। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে দুর্নীতি।

দেশের সঞ্চালন ব্যবস্থার দুর্বলতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে এ দুর্বলতার জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গ্রামেগঞ্জে ছড়ানো-ছিটানো লাইন, সিস্টেম দুর্বলতা, পুরনো প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়কে দায়ী করেছেন তারা। সঞ্চালন ব্যবস্থায় দুর্বলতা থেকে গেলেও বিদেশি ঋণে বিদ্যুৎ খাতের মনোযোগ এখনো একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেই। দেশে বিদ্যুৎ খাতের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।

সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা সঞ্চালন ব্যবস্থার ঘাটতিতে উৎপাদন সক্ষমতা সময়মতো কাজে লাগাতে না পারার বড় উদাহরণ হতে যাচ্ছে প্রকল্পটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সিংহভাগ অর্থায়ন করেছে রাশিয়া। প্রকল্পে দেশটির দেয়া ঋণের পরিমাণ ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্পটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনক্ষম হয়ে ওঠার কথা রয়েছে। কিন্তু সাত প্যাকেজের আওতায় বাস্তবায়নাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজে এখন পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৪০-৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে যমুনা ও পদ্মা নদীর এপার-ওপার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে গৃহীত প্যাকেজটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। কাজ এগিয়ে নিতে এরই মধ্যে প্যাকেজটিকে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে পিজিসিবি। এ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কোনো তথ্য দিতে পারছে না কেউই। প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৭ সাল নাগাদ। সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন না করে বা সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে তা সার্বিকভাবে সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top