আমলাদের ব্যাংক পরিচালনার বিষয়ে জানতে চায় আইএমএফ

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৫৫; আপডেট: ১ নভেম্বর ২০২২ ২০:৫৫

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাংক প্রশাসনে রয়েছে আমলারা। ব্যাংক পরিচালনায় সচিব এবং সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার এসব আমলারা কতটুকু ভূমিকা রাখছেন এবং কীভাবে রাখছেন, ব্যাংক পরিচালনায় কোথা থেকে, কেমন চাপ আসে সে সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। খবর যুগান্তরের।

একই সঙ্গে তারা সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিকে আরও কার্যকর ও সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার করার প্রস্তাব দিয়েছে আইএমএফ।

সোমবার ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি), বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে বৈঠক করেছে। এছাড়াও প্রতিনিধি দলের একটি অংশ অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে। এসব বৈঠকে তারা ওই সুপারিশগুলো করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছের। এসব বৈঠকে মুদ্রানীতি, সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালন পদ্ধতি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংকগুলোর বোর্ডের স্বাধীনতা বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, আইএমএফ এবিবি’র সঙ্গে বৈঠকে সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়ার ব্যাপারে ব্যাংকারদের মতামত জানতে চাইলে প্রায় সবাই এর পক্ষে মত দেন। আইএমএফও ওই সীমা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করে। বাফেদার সঙ্গে বৈঠকে ডলারের দর কিভাবে তারা নির্ধারণ করে তা জানতে চায়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারের কোনো মহলের হস্তক্ষেপ আছে কিনা সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে আইএমএফ। জবাবে বাফেদার পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বাজারের সার্বিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ডলারের দাম নির্ধারণ করেন। প্রয়োজন অনুযায়ী সেটি আবার সংশোধনও করেন।

এ প্রসঙ্গে আইএমএফ বলেছে, ডলারের দর বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। এতে বিনিময় হার বা অর্থনীতিতে কোনো সমস্যা থাকলে তা ধরা পড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে মুদ্রানীতিকে আরও কার্যকর করা ও সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনায় আরও সংস্কার আনার প্রস্তাব করে। কেননা বর্তমান ঋণ ব্যবস্থায় সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। মুদ্রানীতি সঠিকভাবে কাজ করছে না। একে আরও কার্যকর করার জন্য মুদ্রানীতির উপকরণগুলোকে আরও কার্যকর করার প্রস্তাব করা হয়।

সরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার শুরুতেই আইএমএফ জানতে চায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কি কাজ করেন। পর্ষদ সভার আলোচ্যসূচি কিভাবে নির্ধারিত হয়। কী কী স্থান পায়, কীভাবে আলোচনা হয়-এসব তথ্য। এছাড়া ব্যাংক পরিচালনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পর্ষদের স্বাধীনতা কতটুকু, কেমন চাপ আসে, কোথা থেকে এসব চাপ আসে তা জানতে চাওয়া হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এত বাড়ছে কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আইএমএফ। ঋণ খেলাপি করতেও বেশ কিছু কৌশল গ্রহণ করা হয় তার যৌক্তিকতা নিয়েও কথা বলেন তারা। এছাড়া ঋণ পুনঃতফশিল করতে বোর্ড মিটিংয়ে এজেন্ডা থাকে কিনা, কীভাবে পুনঃতফশিল করা হয়, রিশিডিউল করতে কোনো চাপ থাকে কিনা সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

বৈঠকেও ঋণ খেলাপির হার আন্তর্জাতিক মানের মধ্যে নিয়ে আসার তাগিদ দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একটি দেশের খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এ হার প্রায় ৯ শতাংশ। এদিকে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার ২০ শতাংশের বেশি যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব আলোচনাই ফলপ্রসূ হচ্ছে। আইএমএফের চাওয়া সব তথ্যই দেওয়া হচ্ছে।

আইএমএফের প্রতিনিধি দলটি ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশে আসে ঋণ বিষয়ে আলোচনা করতে। তারা আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে অবস্থান করবে।

 

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top