হামলা-সংঘর্ষ বাড়ছে, অভিযোগ আসছে ইসিতে

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২৬; আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২৭

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপিবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের মুখোমুখি দলটিরই অন্তত চার শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। ইতিমধ্যে প্রতীক পেয়ে প্রচারে নেমেছে তারা। এখন চলছে নির্বাচনী মাঠে প্রভাব বিস্তারের লড়াই। প্রতিদিনই বাড়ছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা। খরব মানবজমিন।

গত দু’দিনে কুষ্টিয়া, বরিশাল, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, পিরোজপুর ও পাবনাসহ বেশ কিছু আসনে মাঠ দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, অফিস ভাঙচুর, প্রার্থীকে অবরুদ্ধ রাখাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এসব অপ্রীতিকর ঘটনা মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ঘিরেই।

এজন্য হুমকি ও হামলার শিকার প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রী ও হেভিওয়েট প্রার্থীরাও। ময়মনসিংহ সদরে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপনকে ঘিরে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম রফিকুল ইসলাম।

পিরোজপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ক্যাডার দিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর, পুড়িয়ে দেয়া, সমর্থক ও কর্মীদের বাসায় গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করা এবং শহরে সশস্ত্র মহড়ার অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শ. ম. রেজাউল করিম।

গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে দেয়া এক লিখিত অভিযোগে আউয়ালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

অভিযোগে শ. ম. রেজাউল করিম লিখেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম এ আউয়ালের ভাই মুজিবুর রহমান খালেকের ছেলে তানভীর মুজিব অভির নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ জন অস্ত্রধারী ক্যাডার রোববার (১৭ই ডিসেম্বর) আড়াইটায় পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা বাজারে আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সিকদার মল্লিক ইউনিয়নে গিয়ে একইভাবে সন্ত্রাসী কাণ্ড ঘটায়। পরে আলামকাঠি নামক স্থানে আমার নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়। আমার সমর্থকের মোটরসাইকেল ভেঙে পুড়িয়ে ফেলে।

সেখান থেকে শহরে গিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ সজলের কালীবাড়ির অফিস এবং তার বাসায় হামলা করে ভাঙচুর করে। এ ছাড়া নৌকা প্রতীকের সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করেছে। জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সিকদার মো. চানের বাসা ঘেরাও করে আছে প্রায় ২০০ সশস্ত্র ক্যাডার।

পাবনা-১ আসনে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদের ডেপুটি স্পিকার এড. শামসুল হক টুকু এবং আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের মধ্যে চলছে মাঠ দখলের লড়াই। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে বাধা, হুমকি, কর্মীদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। নৌকার এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করে নৌকায় ভোট চেয়েছেন তিনি। এদিকে রাজবাড়ী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকীর নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিয়েছে জাকির হোসেন ওরফে হিরু নামের এক ইউপি সদস্য।

এ বিষয়ে নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, দুপুরে আমার পক্ষে রতনদিয়া বাজারে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছিল। ভ্যানে মাইকও ছিল। কিন্তু দুইটা না বাজায় মাইক বন্ধ রাখা ছিল। রতনদিয়া বাজারে আমার লিফলেট বিতরণের সময় ইউপি সদস্য জাকির হোসেনের নেতৃত্বে আরও দুই-তিন জন সেখানে উপস্থিত হন। জাকির আমার সমর্থকের কাছ থেকে লিফলেট নিয়ে ফেলে দেন এবং তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে রতনদিয়া বাজার থেকে তাড়িয়ে দেন।

ঝিনাইদহের সদর উপজেলার বাদপুকুর গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়া জাহেদী মহুলের পোস্টার টানানোকে কেন্দ্র করে নারী ইউপি সদস্য আম্বিয়া খাতুন লাকিকে মারধর ও পোস্টারে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার রাতে হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, বাদপুকুর গ্রামের আতিয়ারের দোকানের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়া জাহেদী মহুলের ঈগল প্রতীকের পোস্টার টানাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় নৌকা প্রার্থীর সমর্থক সাগান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকবার ও সাবেক ইউপি সদস্য নোয়াব আলী তাকে বাধা দেন এবং বেশ কয়েকজন তার ওপর হামলা চালান। এ ছাড়া পোস্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

অন্যদিকে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শাঁখারীদহ বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়া জাহেদী মহুলের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে প্রতিপক্ষ নৌকার সমর্থকরা এই হামলা চালান জানিয়ে তিনি বলেছেন, শাঁখারীদহ বাজারে রাত ৯টার দিকে হঠাৎ নৌকার সমর্থকরা হামলা চালিয়ে তাদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন। অফিসের চেয়ার ও টেবিলও ভাঙচুর করা হয়। হামলায় শাঁখারীদহ গ্রামের মুকুল, শিখা মেম্বার ও কামরুল নামে তিন ব্যক্তি আহত হন। আহতদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এম ইসফাক আহসান (সিআইপি) নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা আমার বাসায় হামলা করেছে। এজন্য আমি একটি মামলা করেছি। দুই দিন পরে সেই মামলা থানায় গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও দুই ঘণ্টা পরেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে আমি শঙ্কিত। এজন্য নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি।

চাঁদপুর-২ আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ওরফে মায়া। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে শোকজ করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। ময়মনসিংহে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১ স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীমের ট্রাক প্রতীকে নির্বাচনী প্রচারণা ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে রফিকুল ইসলাম (৫২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দু’জন।

মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে সিরতা কোনাপাড়া হুতারবাড়ীর মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মাঈন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নিহত রফিকুল স্থানীয় চর ভবানীপুর কোনাপাড়া এলাকার মৃত নূর হোসেনের ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

এ বিষয়ে ওসি মো. মাঈন উদ্দিন জানান, কোনাপাড়া হুতারবাড়ীর মোড়ে আইনুদ্দিনের দোকানের সামনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপনকে কেন্দ্র করে নিহতের ছোটভাই মো. ফারুকের (৪০) সঙ্গে অপর ভাই ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে রাজু (২৮) ও সাজু (২৫)-এর কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে কিলঘুসির ঘটনা ঘটে। পরে রফিকুল ঘটনাস্থলে এলে কিলঘুসি মারতে শুরু করে ভাতিজারা। একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। দু’পক্ষই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক।

কে এ ক্যাম্পের নেতৃত্ব দেবে এ নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। রফিকুলের সঙ্গে ভাতিজাদের আগে থেকেই বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। ঘটনার তদন্ত চলছে, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top