পাক-বাংলাদেশ সম্পর্কে নজর রাখছে চীন-ভারত
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারী ২০২১ ০০:২১; আপডেট: ৩ মে ২০২৫ ১১:৩৩
-2021-01-15-18-21-11.jpg)
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উপর নজরদারি রাখছে চীন ও ভারত। সম্প্রতি বাংলাদেশের ওপর থেকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সাথে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বৈঠকে পাকিস্তানকে ৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানায় পাকিস্তান। পাকিস্তান-বাংলাদেশের এমন মসৃণ সম্পর্কে শঙ্কা বাড়ছে ভারতীয় কূটনীতিক বিশ্লেষকদের।
দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। যেখানে ভারত বাংলাদেশকে বন্ধু এবং পাকিস্তানকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে।
বাংলাদেশে ভারতীয় কূটনীতিক হিসেবে পিনাক চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সহায়তা করছে চীন।
এ বিষয়ে চক্রবর্তী বলেন, আমার কোনো সন্দেহ নেই যে চীন পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে স্বাভাবিককরণে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চীন যায় যে পাকিস্তান বাংলাদেশে তাদের শক্তি বাড়াক যাতে ভারতের বিরুদ্ধে এটি ব্যবহার করা যায়। এ সময় বাংলাদেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি-এর সময়ের উদাহরণ দেন এই সাবেক কূটনীতিক।
চীন এমনটি করতে চাইছে কারণ তারা চায় যে ভারতের প্রতিবেশীর দেশগুলোতে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলতে। এটি তাদের স্ট্রিং পার্ল কৌশলের একটি অংশ।
একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া বাংলাদেশের জন্য একটি আবেগপ্রবণ বিষয় এবং তারা এটি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রদেশের শাহাব এনাম খান বলেন, ঐ গণহত্যা বাংলাদেশকে ট্রমার মধ্যে রেখেছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সেনাদের হাতে ৩০ লাখ বাংলাদেশি শহীদ হন। ঐ সময় পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা ধর্ষিত হন দুই লাখের বেশি বাঙালি নারী।
নয় মাস চলা বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধে শেষের দিকে জড়িয়ে পড়েছিল ভারতও। ওই সময় থেকে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে গণহত্যার ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪৩ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এই দুই দেশের বাণিজ্যের বড়ো বিনিয়োগকারী আবার চীন। ২০১৯ সালের চীনের সঙ্গে বাংলাদেশে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে এবং দেশটি আরও ৪০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে।
ভারতের পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর বাংলাদেশর সঙ্গে পাকিস্তানের যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল তা আবার স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সাথে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকির বৈঠকের মাধ্যমে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর তখন পাকিস্তানের সংসদে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছিল।
বর্তমান বাংলাদেশে নিযুক্ত পাক রাষ্ট্রদূত ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকি গত বছরের জুলাইয়ে দায়িত্বগ্রহণ করেন। ঐ বছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শাহাব এনাম খান বলেন, বেইজিং বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সম্পর্ককে স্বাভাবিক দেখতে চায়।
এদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারতও বরাবরের মত চাইছে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখতে। এটি নিশ্চিত করতে গত আগস্টে ভারতের কূটনীতিক হর্শ শ্রিংলা ভারতে সফর করেছিল। ঐ সফরে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন , শেখ হাসিনা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে। আর এ জন্যই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বিতর্কতি নাগরিকত্ব আইন এবং তিস্তা চুক্তির সমাধান দ্রুত করতে হবে।
- এসএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: