ধর্ষণরোধে নৈতিক শিক্ষার প্রতি জোর দিতে বলছেন বিশ্লেষকরা

দেশে দিন দিন ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০২১ ১৬:২৫; আপডেট: ২৬ জানুয়ারী ২০২১ ১৪:৩১

প্রতিকি ছবি

দেশে দিন দিন ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। দিন যত যাচ্ছে ধর্ষণ,গণধর্ষণ-হত্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিগত দিনের পরিসংখ্যানগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় প্রতিবছরই বাড়ছে এই ধরণের নৃশংস ঘটনা। বাংলাদেশ পুলিশের তথ্যমতে গত বছর ৫ হাজার ৪০০ নারী ও শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র আসকের দেয়া তথ্যমতে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ধর্ষণ বেড়েছে প্রায় দিগুণ। ১৮ সালে ৭৩২ ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও ১৯ সালে তা বেড়ে ১৪১৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন তাদের দেয়া তথ্যসূত্র বলছে, ১৮ সালে শিশু ধর্ষণ ছিলো ৩৫৬ যা ১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০২ জনে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম বলছে ২০১৯ সালে প্রতিদিন গড়ে ৮৪টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে ধর্ষণের ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলছে। সরকারের কোন উদ্যোগই থামাতে পারছেনা এই নৃশংস ঘটনা।
ধর্ষণের শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করা হলেও বাস্তবে পড়ছেনা এর কোন প্রভাব। আইনের প্রয়োগের দুর্বলতা ও মানুষের নৈতিক স্খলনকেই দায়ি করছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার অভাবকেও দায়ি করছেন অনেকেই। রাজটাইমসকে বিশ্লেষকদের দেয়া একান্ত মতামত পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো,

ধর্ষণ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আব্দুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, দিনদিন ধর্ষনের ঘটনা সমাজকে চিন্তার মধ্যে ফেলেছে। সমাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে এ ধরণের ঘটনা সমাজে বেড়ে যায়। আইনের শাসন দেশে না থাকাও এর একটা বড় কারন হিসেবে দেখছেন তিনি। সিদ্দিকী বলেন, জনপ্রতিনিধিদের জনগণের নিকট জবাবদিহিতা না থাকা একটি বড় কারন এসমস্ত ঘটনার জন্য। আইনের কার্যকর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে জনমনে বলে তিনি মনে করেন। একটি গণতান্ত্রিক রাস্ট্র হিসেবে দায়িত্ব হলো জন সাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করা। ধর্ষনের ঘটনার ফলে সামাজিক নিরাপত্তা অনেকটাই হুমকির মুখে পড়ছে। সমাজের মানুষ প্রতিবাদের কথা চিন্তা করতেও ভয় পাচ্ছে। কিন্তু সামাজিকভাবে এধরণের ঘৃণ্যকাজ প্রতিরোধ করা না হলে ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে। তিনি মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেলে মেয়েরা যে অবাধ ব্যবহার করছে এবং এসব মাধ্যমের যে বিষয়বস্তু এটিরও প্রভাব পড়েছে এসব ঘটনার ক্ষেত্রে।

তিনি মনে করেন রাস্ট্রকে আরও বেশি সজাগ ও কঠোর হওয়া দরকার এসব ঘটনা রোধে। সরকার চাইলেই রাস্ট্রযন্ত্র ব্যববহার করে ধর্ষণ-হত্যার মতো জঘন্য কাজ বন্ধ করতে পারেন।

এদিকে জেলা গার্লগাইডস এসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা কমিশনার সাবরীনা সারমিন বনি মনে করেন, সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, ইসলামী বিধিবিধান না মানার প্রবণতা, নারীর মর্যদা যথাযথ মূল্যায়ন না করাটা ধর্ষনের একটা বড় কারণ হতে পারে। তিনি মনে করেন, পারিবারিক শিক্ষা, অপসংস্কৃতি, সন্তানকে বাবা-মায়ের যথেষ্ট সময় না দেয়া এগুলোও এ ধরণের ঘটনার একটা বড় কারন। পরিবারগুলো আজ নৈতিক শিক্ষার চেয়ে ক্যারিয়ারকে বেশি প্রাধান্ন দিচ্ছে আর তা করতে গিয়ে পরিবার অনেকটাই বিধি নিষেধে শিথিলতা দেখাচ্ছে ফলে সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে কি করছে তা ওভারলুক হচ্ছে। আর এ সুযোগে সন্তান ইচ্ছে মতো স্বাধীনভাবে নিজেকে চালিত করতে গিয়ে বিপথগামী হচ্ছে। তিনি মনে করেন, সন্তানকে বাবা মায়ের যথেস্ট সময় দেয়া দরকার, তাদের গতিবিধি মূল্যায়ন করা জরুরি। তিনি একইসাথে ইসলামের যে বিধিবিধান রয়েছে অর্থাৎ পর্দার বিধান তা যখাযথভাবে পালন করতে হবে, তাহলে এ ধরনের ঘটনা কমার সম্ভবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ইসলামী স্কলার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোশাররফ হোসাইন বলেন, ইসলামী জ্ঞানের অভাব, সমাজে কুরআনের জ্ঞান চর্চার অভাব, আল্লাহ ভীতি না থাকা, পর্দার বিধান না মানা, দেশে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ, শাস্তির বিধান বাস্তবায়ন না হওয়া, কুরআনের আলোকে বিচার না করাসহ অনেক কারন রয়েছে ধর্ষণের পিছনে। পরিবার ও সমাজকে ধর্ষণরোধে পাহরাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে। পর্ণগ্রাফি দেখার সুযোগকেও তিনি দায়ি করেন। জনপ্রতিনিধিদেরও কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে তিনি গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন।

ব্লাষ্ট রাজশাহী ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর এ্যাডভোকেট সামিনা বেগম এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার নানা কারন রয়েছে। মামলার দীর্ঘ সূত্রিতা , বিচার প্রলম্বিত হওয়া, মৃত্যদন্ডের আইন থাকলেও তা ব্যবহার চোখে পড়ারমত নয় ইত্যাদি কারন। তিনি মনে করেন মুত্যুদন্ডের বিধান যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। ধর্ষন বিরোধী স্বতন্ত্র আদালত বানাতে হবে। সপ্তাহে বিশেষ দিন রাখতে হবে ধর্ষনের মামলা পরিচালনার জন্য।
অনলাইনের অবাধ ব্যবহার বিশেষ করে তরুন সমাজকে ব্যপকভাবে প্রভাবিত করছে। ডিজিটাল ডিভাইসগুলোতে যে ধরণের উত্তেজক কন্টেন্ট অবাধে তরুন সমাজ দেখছে তাতেও তারা এ ধরণের কাজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। সুতরাং সেদিকেও আমাদের সজাগ হতে হবে।

শিক্ষায় নৈতিকতার উপর জোর দেয়ার কথাও তিনি বলেন। পরিবারগুলো সন্তানকে মানুষ হতে হবে না বলে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এমন শিক্ষা দেয়া থেকে দুরে থাকতে হবে। তিনি মনে করেন ঘর থেকেই ধর্ষণ বিরোধী অবস্থান শুরু করতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতামত থেকে উঠে আসে নৈতিক শিক্ষার ব্যবহার বাড়িয়ে সমাজকে সচেতন করতে হবে। একইসাথে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ করতে হবে ধর্ষণের মতো অপরাধমূলক কাজ।

এমএস ইসলাম

 

 



বিষয়: ধর্ষণ


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top