লঘুচাপের প্রভাবেই কম মিলছে ইলিশ

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২০ ১৮:১৫; আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২০ ১৮:২১

ইলিশ বাজারজাত করছেন এক শ্রমিক (ছবিঃ সংগৃহীত )

বেশকিছুদিন ধরেই সাগরে জেলেদের জালে পড়ছে না তেমন কোন ইলিশ। তবে পরপর তিনটি লঘুচাপের এমন অবস্থার কথা জানিয়েছেন মৎস বিশেষজ্ঞরা। তবে সাগর শান্ত হলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

দীর্ঘ ৬৫ দিন ধরে সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। মাঝখানে অতিবাহিত হয়েছে একটি মাস। জেলেরা মাছ ধরা শুরু করার পর ভালোই ইলিশ পড়ছিল জালে। কিন্তু বেশকিছুদিন ধরে লঘুচাপের প্রভাবে তেমন মিলছে না ইলিশ।

তবে শীঘ্রই এমন অবস্থা কাটিয়ে উঠার আশার কথা শোনালেন বরগুনা ট্রলার ও মৎস্য সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। তাঁর মতে, সাগর শান্ত হলে ইলিশ বাড়তে পারে। গত বছর এই সময় ইলিশ কম ছিল। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ইলিশ ধরা বেড়ে যায়।

ইলিশ নিয়ে তেমন চিন্তা না করার কথাই বললেন বরিশালের ইলিশ পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী। তিনি বলেন, এখন আর ইলিশের নির্দিষ্ট কোনো মৌসুম নেই। সারা বছরই এখন মাছের এই রাজাকে নদী-সাগরে পাওয়া যায়। আকার আর ওজনেও ইলিশ এখন বেশ তাগড়া।

ব্যবসায়ীদের ধারণাকে সঠিক বলে মনে করেন বিজ্ঞানী ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করছেন, দুই সপ্তাহ ধরে ইলিশ না পাওয়া নিয়ে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, তা সাময়িক। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নদী ও সাগরে ইলিশ আসার পরিমাণ বেড়ে যাবে।

মূলত লঘুচাপকে ইলিশ না মেলার কারণ মনে করছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্যসম্পদবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। তারা জানান, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে তিনটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। উপকূলে ৩ নম্বর ও নদীগুলোয় ১ নম্বর সতর্কসংকেত প্রায় মাসজুড়েই ছিল। তাই জেলেরা সাগরে যেতেও সাহস পাননি। আর ইলিশও গভীর সাগর থেকে উপকূলের দিকে আসেনি।

ইলিশের ওজন ও আকৃতিকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশ। তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে দেশের ইলিশের গড় ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে ধরা পড়া ইলিশের অর্ধেকই ছিল ছোট ও মাঝারি আকৃতির। আর বড় ইলিশ পাওয়া যেত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। চলতি বছর এ পর্যন্ত ধরা পড়া ইলিশের ৭০ শতাংশের ওজন ৫৫০ থেকে ১ হাজার ২৫০ গ্রাম। এর মধ্যে ৫৫০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ হচ্ছে ৫৫ শতাংশ এবং ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ১৫ শতাংশ। গত বছর ইলিশের গড় ওজন ছিল ৮৭০ গ্রাম। এবার তা ৯১৫ গ্রামে দাঁড়িয়েছে।

পর্যবক্ষণ থেকে প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, ওজন ও আকৃতি বেড়ে যাওয়ায় দেশে ইলিশের মোট উৎপাদনও বেড়ে গেছে। গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। প্রতি বছরই ইলিশের উৎপাদন ২০ থেকে ৪০ টন করে বাড়ছে। গত বছর ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার টন।

বিজ্ঞান সম্মতভাবে ইলিশ রক্ষার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে জানান ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশের ইকোফিশ প্রকল্প-২-এর দলনেতা অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব। তিনি জানান, ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৭ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। এ জন্য ইলিশ ধরার জাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার যে নতুন নিয়ম করেছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে।

  • খবর-প্রথম আলো
    এসএইচ

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top