ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ১৪ দলের শরিকরা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৪৯; আপডেট: ৮ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৩৬

ছবি: সংগৃহিত

আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দলের শরিক সব দল ডিজেলের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এই জোটের বাকি দলগুলো মনে করে, হুট করে লিটারপ্রতি ১৫ টাকা দাম বাড়ানো সরকারের একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এই মূল্যবৃদ্ধি এরই মধ্যে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে।

১৪ দলের শরিক নেতারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে ডিজেলের দাম বাড়ানো মুনাফালোভী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আচরণের মতো হয়েছে। ফলে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশীয় বাজারে মূল্য সমন্বয় করার প্রয়োজনে সরকার ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে। তবে এর বিরূপ প্রভাবের বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও ১৪ দলে আরো ১২টি দল রয়েছে। এ দলগুলো হলো জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরীকত ফেডারেশন, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, সাম্যবাদী দল, বাসদ (রেজা), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র।

শরিক দলের নেতারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ডিজেলের দাম কমে তখন এ দেশে দাম কমানো হয় না। এ ছাড়া কভিড মহামারির কারণে জনগণ অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে আছে। এর ওপর এ মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে।

গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আকস্মিক এক ঘোষণায় জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো অবিবেচনাপ্রসূত ও অমূলক। এমনিতেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অনেক চড়া। তার মধ্যে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ব্যয়নির্বাহে যে চাপ তৈরি করবে, তা হবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।

জানতে চাইলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম কমে তখন তো দেশে দাম কমেনি। এখন বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে এ মূল্যবৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, সেখানে ডিজেলের দাম বাড়ানো মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সরকারের উন্নয়নকাজও ব্যাহত হবে।

জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, সামনে ধান চাষের মৌসুম। এ সময়ে ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষক বিপাকে পড়বেন। গণপরিবহনেও ভাড়া বাড়বে। এতে জনভোগান্তি দেখা দেবে। সরকারের উচিত ছিল ভর্তুকি দিয়ে হলেও ডিজেলের দাম না বাড়ানো। দরকার হলে ডিজেলের ওপর যে শুল্ক নির্ধারণ করা আছে, সেটা প্রত্যাহার করে দাম ঠিক রাখা যেত।

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে হঠাৎ লিটারপ্রতি ডিজেলের মূল্য ১৫ টাকা বৃদ্ধি করার সরকারি এই সিদ্ধান্ত দেশের জনগণকে বিস্মিত করেছে। কোনো দায়িত্বশীল, জনগণের সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এভাবে দাম বাড়ানো একেবারেই ঠিক হয়নি। মানুষকে এভাবে ভোগান্তিতে ফেলা কেন? মুখে গণতন্ত্রের কথা বলব আর এভাবে জনগণের অধিকার খর্ব করে ঠুনকো অজুহাতে দাম বাড়নো উচিত নয়।’

তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক বলেন, ‘এটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। সরকারের ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। কারণ সব ক্ষেত্রে ডিজেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে। সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি হবে। আশা করব, সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।’

গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে সিকদার বলেন, এককালীন এভাবে দাম বাড়ানো মোটেও ঠিক হয়নি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সমন্বয় রেখে ক্রমান্বয়ে এ দাম বাড়ানো যেত।

গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা দাম বাড়ানোর পক্ষে নই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তো আছেই। এর সঙ্গে ডিজেলের দাম বাড়ানো মানুষের ভোগান্তি বাড়াবে।’

বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান বলেন, মহামারি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ এমনিতেই দিশাহারা। এ সময়ে সরকার মানুষের পাশে থাকার বদলে ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দিল। এতে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকার মুনাফালোভী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো আচরণ করছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সারের দাম তিন গুণ বেড়েছে। কিন্তু সরকার কৃষকের কথা চিন্তা করে সারের দাম বাড়ায়নি। ডিজেলের দাম বাড়ায় বোরো মৌসুমে সেচের খরচে কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে এ কথা সত্য, এখনো প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে আমাদের ডিজেলের দাম অনেকটাই কম। এর পরও জনজীবনে কী ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। সেগুলো বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top