নীতিনির্ধারকরা দ্বিধায়

উপজেলা নির্বাচনে যেতে কেন্দ্রে চাপ দিচ্ছে বিএনপির তৃণমূল

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০২৪ ০৮:৩০; আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০২৪ ০৮:৪০

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কটের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে বিএনপি। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের বেশিরভাগ নেতা স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। জাতীয় নির্বাচন ও আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে মামলা, গ্রেপ্তার ও আত্মগোপন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে দলের বার্তা পৌঁছে দিতে তারা নির্বাচনকেই সবচেয়ে কার্যকর পন্থা মনে করছে।

গত বৃহস্পতিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলে দুই ধরনের মত রয়েছে। তৃণমূলসহ দলের বিভিন্ন স্তর থেকেও নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ আসছে। এতে করে নির্বাচনে যেতে কেন্দ্রের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়েও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে একটি অংশ সোচ্চার রয়েছেন। তাদের অভিমত, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে যাওয়াই দলের জন্য ইতিবাচক হবে।

বিএনপির বর্জন ও আন্দোলনের মধ্যেও গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিএনপির কিছু নেতাকর্মী। এই ঘটনার জেরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাসসহ প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ছাড়া আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশের নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া। গ্রেপ্তার এড়াতে অন্যরা আত্মগোপনে চলে যান। এক কথায় সংগঠন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর গত ১১ জানুয়ারি দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলেছে। সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোও পর্যায়ক্রমে খুলছে। কিন্তু দলটি এখনো আত্মগোপন অবস্থা থেকে ‘পুরোপুরি’ স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে পারেনি।

বিএনপি দ্বাদশ সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জোরালো কর্মসূচি নিয়ে এখনো মাঠে নামতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটে দলটির অনেক নেতাকর্মী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ মনে করছেন।

তাদের যুক্তি, উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন, এটি সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন না। তাদের মূল টার্গেট, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন। সুতরাং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে গেলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের জয়ী হয়ে আসার সুযোগও বেড়েছে। এ অবস্থায় আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পক্ষে তারা।

বিএনপির এই নেতাদের অভিমত, ফল কী হবে—তা পরের বিষয়, নির্বাচনে গেলে সারা দেশের নেতাকর্মীরা আত্মগোপন অবস্থা থেকে প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পাবেন। এতে করে দল ফের চাঙ্গা হবে, যা আগামীতে আন্দোলনের জন্য সহায়ক হবে।

তারা মনে করেন, বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত দলগতভাবে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রেও নির্বাচন প্রক্রিয়াটি দলের সবার জন্য বিশেষ করে যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। যাতে নির্বাচনে কেউ অংশগ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়। বিএনপিকে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে সংগঠিত করতে প্রয়োজনে দলের এমন সিদ্ধান্ত অঘোষিত থাকবে। বিএনপির হাইকমান্ড এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে যেতে পারে বলে অভিমত তাদের।

তবে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার বিরোধী মত বেশ জোরালো। তাদের যুক্তি, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। এর মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই উপজেলা নির্বাচনে গেলে সারা দেশের নেতাকর্মী-সমর্থক ও জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে। অনেকেই এক দলের দ্বিমুখী অবস্থান হিসেবে তুলে ধরতে পারে।

তারা মনে করেন, ভোটে গেলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ ভোট সুষ্ঠু হবে না। অতীতের মতো এবারও জোর করে বিএনপির প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়া হবে। তা ছাড়া জাতীয় সংসদের মতো উপজেলায়ও একক আধিপত্য ধরে রাখতে ভোট ঘিরে তখন বিএনপির নেতাকর্মীদের নতুন করে হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু হতে পারে। সুতরাং নির্বাচনে যাওয়ার কোনো অর্থ হয় না। যেখানে দলের মূল টার্গেটই ফেল করেছে। বিএনপির কঠোর আন্দোলনের মুখেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সরকারও গঠিত হয়ে গেছে।

জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাচনের যেহেতু এখনো বেশ দেরি রয়েছে, তাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দল এখন বছরব্যাপী সরকারবিরোধী আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতা মূল্যায়ন সাপেক্ষে আগামীতে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন কর্মকৌশল প্রণয়নে ব্যস্ত।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, উপজেলা নির্বাচনের তপশিলের আগেই মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েক নেতা কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন বলে ধারণা দলের। তাদের মুক্তির পর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসতে পারে। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে দলের তৃণমূলের একটি অংশ। খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন মনোভাব জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে দল এখনো অবস্থান স্পষ্ট না করায় কৌশলগত কারণে তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন কখনোই শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু হবে না। সুতরাং তার অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না, সেই সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া আছে। বিএনপি এখনো সেই সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।’

উপজেলা পরিষদের ভোটে দলীয় প্রতীক নৌকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হলে বিএনপি কী করবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে নির্বাচনই তো সুষ্ঠু হয় না। সেখানে দলীয় প্রতীক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।’

তথ্যসূত্র: দৈনিক কালবেলা 




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top