রাজশাহীতে রজমানের শুরুতে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৪ ২২:৩৩; আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ০৫:০৯

ছবি: সংগৃহীত

রমজানের শুরুতেই হাঁসফাঁস অবস্থা রাজশাহীর নিত্যপণ্যের বাজারে। দাম বেড়েছে প্রায় প্রতিটি রমজানকেন্দ্রিক পণ্যের। ফলে ক্রেতারা প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ে বাজারে গিয়ে খাচ্ছেন হিমশিম। তবে বিক্রেতারা বলছেন, সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে এটি সত্য। পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় বেশি দামেই তাদের পণ্য বিক্রি বিক্রি করতে হচ্ছে।

যদিও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।

রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীতে লাগামহীন খেজুরসহ রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো দামে খেজুর বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দোকান ভেদে একই খেজুরের দামে ২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। রমজানের আগের দিন সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর সাবেহ বাজারের বিভিন্ন খেজুরের দোকানে গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। প্রতি কেজি দাবাস খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, আজোয়া খেজুর ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, খুরমা খেজুর ৬০০-৮০০ টাকা।

দাম বেড়েছে সব ধরনের ডালের। খেসারি ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোলার দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা। মশুরের ডালের দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি মশুরের ডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম বেড়ে সাদা চিনি বিক্রি হচ্চে ১৪০ টাকা এবং লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজিতে। অথচ গত বছর রোজায় নিম্নমানের খেজুরের দাম ছিল ১২০-১৫০ টাকা কেজি। এছাড়া ভালো মানের খেজুর ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। যা গত রমজানের থেকে ৫০০ টাকা বেশি।

আর রাজশাহীর বাজারে গত বছর এ সময় প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। এখন কিনতে হলে ভোক্তাকে গুণতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। চিনির কেজিতে এক বছরের ব্যবধানে ক্রেতাদের বেশি খরচ করতে হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

সাহেব বাজারের মুদি দোকানি ইউসুফ আলী বলেন, এবার রোজার অনেক আগেই থেকে ছোলা খেসারি ডালসহ অন্যান্য সব ডালের দাম চড়া। চিনির দাম এখনো বাড়েনি তবে বাড়তে পারে। তেলের দাম কমলেও নতুন দরে তেল বাজারে আছে। সব মিলে রোজার কোনো পণ্যের সুখবর নেই।

যদিও রোজায় পণ্যের দামের লাগাম টানতে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছিল। তবে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য তিন পণ্যে দাম সামান্যও কমেনি বরং বেড়েছে। সয়াবিন তেলেও সবাই সুফল পাচ্ছে না। কারণ বাজারে ১ মার্চ থেকে নতুন কম দামের সয়াবিন তেল সরবরাহ করার কথা থাকলেও এখনো বেশিরভাগ দোকানে পুরোনো দামের তেল বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে কম দরের পাঁচ লিটারের বোতল আসলেও এক বা দুই লিটারের বোতলের দেখা মিলছে না।

অন্যদিকে, রমজান এলেও কমছে না পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম। গত বছর রোজার আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সেই দাম এখন প্রায় তিন গুণ। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সেই হিসেবে এক কেজি পেঁয়াজে বেশি খরচ হবে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আদা ২২০ থেকে ২৪০ টাকা ও রসুন ২২০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত রমজান থেকে প্রায় প্রতি কেজি ১০০ টাকা বেশি। তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির এখনো গত বছরের দামকে অতিক্রম করেনি। যদিও গত দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। সেই সঙ্গে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। গরুর মাংসের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, সোনালি মুরগি ও কক মুরগিরও দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, মুলা প্রতি কেজি ২০ টাকায়, ঝিঁঙে প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, পেঁয়াজের ফুল প্রতি কেজি ৫০ টাকায়, বেগুন প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৪০, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকায়, ফুলকপি ২০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকায়, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৮০, মটরশুঁটি প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, গাজর প্রতি কেজি ৪০ টাকায় ও শিমের বিচি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়, চাষের শিং মাছ প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়, রুই প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়, চাষের কই প্রতি কেজি ৩০০ টাকায়, দেশি ছোট কই প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়, পাবদা প্রতি কেজি মানভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়, শোল মাছ একটু বড় সাইজের প্রতি কেজি ৯০০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ টাকায়, কাতলা মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় ও টেংরা মাছ ছোট সাইজের প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রমজান উপলক্ষে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব এর রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার রমজান উপলক্ষে যদি বিকল্প পদ্ধতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতো তাহলে ভোক্তারা উপকৃত হতো। এবার ন্যায্যমূলের বাজার তথ্য টিসিবির পণ্য বিক্রিও সেভাবে দেখিনি। রাজশাহীতে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা লাভের আশায় বাজার নিজেদের কব্জায় রেখে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। ফলে অসহায় ভোক্তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে।’

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মো. মাসুম আলী বলেন, ‘আমরা রমজান উপলক্ষ্যে রাজশাহীর বানেশ্বর, খড়খড়িসহ তিনটি এলাকায় সোমবার দিনব্যাপী বাজার মনিটরিং অভিযান অব্যাহত রেখেছিলাম। কিন্তু খুব বেশি তারতম্য পাইনি। শুধু মূল্য তালিকা না থাকায় খড়খড়ি এলাকায় এক মুদির দোকানিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।’




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top