নওগাঁ ও দিনাজপুর থেকে প্রত্নসম্পদ পাচার বেড়েছে

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৪ ১২:৩০; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:০৫

উদ্ধারকৃত নারী মূর্তি ছবি: প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ইটভাটা থেকে গত বৃহস্পতিবার কষ্টিপাথরের একটি মূর্তি উদ্ধার করে পুলিশ। এর প্রায় এক সপ্তাহ আগে (৫ মার্চ) কষ্টিপাথরের আরেকটি মূর্তির অংশবিশেষ পাওয়া যায় ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে। খবর বণিক বার্তার। 

এছাড়া গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিরল উপজেলার আজিমপুর ইউনিয়নের কুচিলাপুকুর গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিষ্ণু মূর্তি।

দিনাজপুরের মতো নওগাঁ থেকেও মাঝেমধ্যেই প্রত্নবস্তু উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ধামইরহাট উপজেলায় অভিযান চালিয়ে কষ্টিপাথরের দুটি মূর্তি উদ্ধার করে বিজিবি। তখন বিজিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসে তারা মোট সাতটি প্রত্নবস্তু উদ্ধার করে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নওগাঁ ও দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় বেশি প্রত্নবস্তু পাওয়া যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রত্নতত্ত্ব গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নওগাঁ ও আশপাশের কয়েকটি জেলায় প্রাচীন বহু নিদর্শন রয়েছে।

এছাড়া এসব জেলার সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। এসব কারণে প্রত্নবস্তু পাচারকারীরা এ অঞ্চলে বেশি সক্রিয়।সীমান্তের ওপাড়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট এলাকাও প্রাচীন নিদর্শনের জন্য বিখ্যাত। সেখানে বেশকিছু বিহার রয়েছে। ওই সব বিহার খনন করে যেসব প্রত্নসম্পদ পাওয়া গেছে, সেগুলো বালুঘাটের একটি প্রত্ন জাদুঘরে সংরক্ষণ করা রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম শাহনেওয়াজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সারা দেশেই অনেক প্রত্নসম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ ও আশপাশের কয়েকটি জেলায় প্রাচীন বহু নিদর্শন রয়েছে। সেখানে নতুন করে খননকাজ চলছে। দেশের প্রত্নসম্পদের সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

গত বছর রানীনগর উপজেলার উজালপুরে প্রায় দেড় হাজার বছরের প্রাচীন আরো চারটি বৌদ্ধবিহারের সন্ধান পাওয়ার তথ্য জানায় প্রত্ন অধিদপ্তর। খনন কার্যক্রমে অংশ নেয়া প্রত্ন অধিদপ্তরের বগুড়া অঞ্চলের সহকারী কাস্টডিয়ান জায়েদ আলী জানান, খননকালে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের আকৃতিতেই অবকাঠামো পাওয়া গেছে। পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি বৌদ্ধদের জ্ঞানভিত্তিক কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে।

খননকাজ করতে গিয়ে মাটির নিচে বিহারের যে অবকাঠামো পাওয়া গেছে, তার ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটি বৌদ্ধদের ধর্মচর্চার একটি বিদ্যাপীঠ ছিল। কারণ এ বিহারের সঙ্গে জেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের অবকাঠামোর যথেষ্ট মিল রয়েছে। এছাড়া খননকাজ করতে গিয়ে সেখান থেকে চিনামাটির বদনা, বাটি ও মূর্তি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো সমসাময়িক পাল রাজত্বকালের আগের ইতিহাসের স্বাক্ষর বহন করছে।

কয়েক বছর ধরেই নওগাঁ ও দিনাজপুর জেলায় প্রত্নবস্তু উদ্ধারের ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০২০-২১) দেখা গেছে, ওই অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ২১টি প্রত্নবস্তু উদ্ধার করা হয়। এগুলোর মধ্যে ১১টি উদ্ধার হয় নওগাঁ থেকে। দিনাজপুরে পাওয়া যায় সাতটি। এছাড়া দুটি পাওয়া যায় জয়পুরহাটে ও একটি প্রত্নবস্তু পাওয়া যায় পঞ্চগড়ে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দুটি অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন রয়েছে—২০২০-২১ ও ২০২২-২৩। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সময়ে সারা দেশে আটটি প্রত্নবস্তু উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে চারটি কালো পাথরের মূর্তি উদ্ধার হয় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে।

আইন-শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, নওগাঁর সীমান্তবর্তী তিনটি এলাকা দিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রত্নবস্তু পাচার হয়। এগুলো হলো সাপাহার উপজেলার হাঁপানিয়া ও করমুডাঙ্গা সীমান্ত এবং পোরশা উপজেলার নীতপুর সীমান্ত। সীমান্তবর্তী এসব এলাকা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে। এ সুযোগে পাচারকারীরা অর্থের বিনিময়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রত্নবস্তু পাচার করে থাকে।

প্রত্নবস্তুর চোরাচালানপ্রবণ জেলা হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নওগাঁ ও দিনাজপুরকে চিহ্নিত করেছে। অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. লিয়াকত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‌‘দেশের প্রাচীন জনপদগুলোয় ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় অনেক প্রত্নবস্তু রয়েছে। এসব সম্পদ রক্ষায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বিশেষ করে নওগাঁ ও দিনাজপুরের মতো জেলাকে প্রত্নবস্তু চোরাচালানপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে যেসব স্থানে খননকাজ চলছে, সেসব এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top