ওয়াসার সাড়ে ৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২০ ০৪:০৩; আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২০ ০৪:০৫

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাষণ কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মোট সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে ৩ হাজার ৭৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। শেরেবাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সভায় সভাপতিত্ব করেন।

রাজশাহী ওয়াসার প্রকল্পটি চলতি মাস থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- সাতটি পাম্প হাউস নির্মাণ ও ৩০টি উৎপাদক নলকূপ প্রতিস্থাপন করা। এ ছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ৮০টি উৎপাদক নলকূপ রিজেনারেশন, ৬০টি উৎপাদক নলকূপের পাম্প মোটর সরবরাহ, শ্যামপুর পানি শোধনাগারে ১২টি পাম্প মোটর সরবরাহ, শ্যামপুর পানি শোধনাগারের ড্রেজিং সিস্টেম প্রতিস্থাপন, শ্যামপুর পানি শোধনাগারে পুকুর পুনর্খনন ও ফিল্টার প্রতিস্থাপন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্যাসের ৯৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, বিভিন্ন ব্যাসের ৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, ৬০০টি ওয়াস আউট স্থাপন, ১৩৩ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার, পাম্প মনিটরিং ও পরিচালনা সফটওয়্যার ক্রয়, পানি পরীক্ষাকরণ যন্ত্রপাতি ক্রয়, যানবাহন ক্রয়, পাম্প হাউস, জেনারেটর ইত্যাদি মেরামতসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

এ প্রকল্পে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্বাসন বা সংস্কার কাজ দেখতে বিদেশ যাবেন ১০ কর্মকর্তা। প্রত্যেকের পেছনে ব্যয় হবে ৪ লাখ টাকা করে। এতে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিতর্ক চলছে। তবে একনেকে প্রকল্পটি পাস হলো।

প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি ব্যয় সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের বলেছেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে হবে, এটি স্পষ্ট করেই বলেছেন তিনি। তবে প্রকল্প প্রস্তাবের সব পাতা দেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। আমি সংশ্লিষ্ট সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছি, যাতে সত্যিই এসব ব্যয়ের প্রয়োজন আছে কি না সেটি দেখা হয়। প্রকল্পে বিদেশ সফরের বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।

এদিকে অনুমোদিত অন্য ছয় প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে নতুন করে স্থাপন করা হবে পাঁচ হাজার ডিজিটাল ল্যাব। এর মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আইসিটিতে দক্ষতা বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক আইসিটি সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত স্কুল অব ফিউচার নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় কনটেন্ট তৈরি সম্ভব হবে। চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে আইসিটি অধিদফতর।

প্রকল্পের আওতায় প্রাতিষ্ঠাকি পরামর্শকের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ কেনাকাটা বাবদ ৬৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, ল্যাব ও পিআইইউ স্থাপন বাবদ ১৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনা বাবদ ২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং শিক্ষা ও শিক্ষণ উপকরণ বাবদ ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। এসব ল্যাবে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার প্রস্তুত করা, পরামর্শক ফার্ম নিয়োগ, ৩৬ হাজার ২০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া, আইসিটি বিষয়ে ৬০টি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি এবং কমিউনিকেটিভ ইংলিশ বিষয়ে ৮০টি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কেনা, ভাষাগুরু সফটওয়্যার ভার্সন-২ তৈরি, ৬৪টি সেমিনার বা কর্মশালার আয়োজন এবং বৈদেশিক ও স্থানীয় প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে প্রকল্পটির আওতায়।

অনুমোদিত হওয়া খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তুলার গবেষণা উন্নয়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মেহেরপুর মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েঠে ২৩১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একনেক সভায় ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট প্রকল্প থেকে ৪৬০ কোটি টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে ১২৫ কোটি টাকা কমিয়ে ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।

একনেক সভায় এনইসি মিলনায়তনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান গণভবন থেকে একনেক সভায় যুক্ত হন। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top