ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলের করোনা পরিস্থিতি

সোহরাব হোসেন সৌরভ | প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২১ ০০:৫০; আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:২৬

দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহর রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলের করোনা পরিস্থিতি। শহর তো বটেই করোনা এখন থাবা বসিয়েছে গ্রামাঞ্চলেও। রাজশাহীর গ্রামগুলোতে ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ করেছে করোনা সংক্রমণ। গ্রামাঞ্চলের করোনা সংক্রমণের হার এখন রাজশাহী শহরকেও ছাড়িয়ে গেছে। রাজশাহীর উপজেলাগুলোর বাড়িতে বাড়িতে এখন জ্বর,সর্দি,কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগী। করোনার নতুন হটস্পট হয়ে উঠছে এখন রাজশাহীর পাঁচ উপজেলা। শহর থেকে পশ্চিমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সঙ্গে লাগোয়া রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার অবস্থা বেশি খারাপ।

হাসপাতাল পরিচালক বলেন, এ দু’টি উপজেলা থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী আসছে। এর পরের অবস্থানে আছে দুর্গাপুর,বাগমারা ও চারঘাট। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।

তিনি বলেন, নতুন ভর্তি রোগীর প্রায় ৬০ শতাংশই গ্রাম থেকে এসেছেন যা রীতিমত ভয়াবহ। বর্তমানে গ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

এ পরিস্থিতিতে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় করোনা সংক্রমণ থামানো যাচ্ছে না। তাই এখন রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। তবে এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি জানিয়ে সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই এই মহামারি মোকাবেলা সম্ভব বলে জানান তিনি।

হাসপাতাল পরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজশাহীর ৪৪ জন,চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬ জন, নাটোরের ২ জন, নওগাঁর ৫ জন,পাবনার ২ জন ও ঝিনাইদহের ১ জন। মঙ্গলবার রোগী ভর্তি ছিল ৫৬ জন। এর মধ্যে গ্রামের রোগী ৩৪ জন যা ৬০ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর আগের দিন সোমবার হাসপাতালে ৬১ জন কোভিড রোগী ভর্তি হন যার মধ্যে গ্রামের ৩৬ জন ছিল যা ৫৯ দশমিক ০২ শতাংশ। তার আগের দিন রোববার ভর্তি হওয়া ৫৪ জন রোগীর মধ্যে ২৭ জন ছিল গ্রামের যা ছিল ৫০ শতাংশ।

এদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬ টা থেকে বুধবার সকাল ৬ টার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তারা মারা যান। এদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। এদের ৮ জনের করোনা পজেটিভ ছিল। বাকী ৮ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ৮ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ জন, নাটোরের ২ জন, নওগাঁর ২ জন ও ঝিনাইদহের ১ জন।। ছয় জন মারা যান আইসিইউতে ।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, গত তিন-চার সপ্তাহ ধরে এ হাসপাতালে যে সব রোগী করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে আসছেন তাদের বেশির ভাগই শ্রমজীবী। আগে বয়স্করা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এলেও এখন সব বয়সের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছেন। মারাও যাচ্ছেন। গ্রামের মানুষের মধ্যে নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহও কম। চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি কম মানা, সব জায়গায় অবাধে চলাচল, মাস্ক না পরাসহ আরও নানা কারণে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে।

লকডাউন প্রসঙ্গে হাসপাতাল পরিচালক বলেন,সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ইতিবাচক ফল দেয়। রাজশাহীতে যে লকডাউন দেওয়া হয়েছে, সেটা আরও আগে দেওয়া উচিত ছিল। এখন ঘরে ঘরে রোগী আছে বলা যায়। শুরুতেই কার্যকরী লকডাউন দিতে পারলে ভালো হতো। এক বা দুই সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। লকডাউন কার্যকর করা গেলে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


এদিকে রাজশাহীতে আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে সর্বাতœক লকডাউন। চলবে আগামী ৩০ জুন রাত ১২ টা পর্যন্ত। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল লকডাউন বাড়ানোর এ ঘোষণা দেন।

 

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top