ফ্রিল্যান্সারদের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার পথ খুলছে
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২১ ০৪:০৩; আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৭
 
                                
ফ্রিল্যান্সারদের নগদ সহায়তা দিতে সরকার একটি নীতিগত কাঠামো তৈরিতে চেষ্টা করছিলো আরও দুই বছর আগ হতে।
নীতিগত ও পদ্ধতিগত নানা জটিলতায় দীর্ঘ সময় পর হলেও অবশেষে ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সাররা অল্প সময়ের মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বা ভর্তুকির সুবিধা পেতে চলেছেন। অর্থমন্ত্রণালয় হতে এ বিষয়ে সম্মতির সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বা ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার দেয়। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক আউটসোর্সকে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেয়ার তালিকায় রাখা হলেও এই সহায়তা বা ভর্তুকি ব্যক্তি পর্যায়ে আউটসোর্সিং করা ফ্রিল্যান্সাররা পাবেন কিনা তা স্পষ্ট করা হয়নি।
তখনকার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছিলেন, এই সহায়তা বা ভর্তুকি ব্যক্তি পর্যায়ে আউটসোর্সিং করা ফ্রিল্যান্সাররাও যেন পান তা দেখা হচ্ছে।
এরপর ব্যাক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সারদের অফিস, প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় না থাকা, ফ্রিল্যান্সিং আয়ের প্রমাণ, অনিয়ম হলে চিহ্নিত করা ইত্যাদি ইস্যুতে এই সহায়তা দেয়ার প্রক্রিয়াটি ধীরে হয়ে যায়।
২০২০ সালের অক্টোবরে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এই ১০ শতাংশ প্রণোদনা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. ফজলে কবিরকে চিঠি দেন।
নভেম্বরে এসে পলক ফ্রিল্যান্সাররা যেন তাদের আইডি হতে ব্যাংকে তথ্য দিতে পারে এবং তখন ১০ শতাংশ ক্যাশ প্রণোদনা পায় সে দাবি রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
বিষয়টিতে উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এরপর এ বিষয়ে একটি কমিটি করে অর্থমন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও। শেষে কমিটি ব্যক্তি ফ্রিল্যান্সারদেরও ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
এই সুবিধা পেতে ফ্রিল্যান্সারদের প্রমাণ দাখিল করতে হবে যে তারা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে এই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছেন। এর একটি কাঠামো এখন তৈরি হচ্ছে। এরপর অর্থমন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে।
এরআগে ২০২০ সালের নভেম্বরে ফ্রিল্যান্সাররা যেনো সহজে নিজেদের উপার্জিত অর্থ পেতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করে দেন প্রধানমন্ত্রী।
তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে মানুষ অর্থ উপার্জন করছে ঘরে বসে, গ্রামে বসে। কিন্তু এর কোনো আসলে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিলো না। আর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিটা না থাকার কারণে এ যে তারা অর্থ উপার্জন করছে, অনেক সময় তাদের নানারকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় অথবা ব্যাংকেও নানা প্রশ্ন করে।’
‘এটা নিয়ে অবশ্য আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করেছি, অর্থ সচিবের সঙ্গেও আলোচনা করেছি যেন এই অসুবিধাটা আর না হয় সে ব্যবস্থা তারা ইতোমধ্যেই নেবে’ বলছিলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আজকে এই ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড প্রদানের জন্য একটা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে, যা থেকে সকল ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এতে ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক পরিচিতি তৈরির পাশপাশি ব্যাংক ঋণ পেতে পারবে এবং তাদের ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করতে পারবে।’
‘এটাও একটা কাজ। এটাও এক ধরনের চাকরি। কিন্তু সেটা হচ্ছে নিজেই নিজের বস এবং শুধু বস না, আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া, অন্যের বস হওয়া।’ বলছিলেন তিনি।
সেই ২০১৮ সালেই ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক হতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট অনুয়াযী এই খাতে বিশ্বের মোট বাজারের ১৬ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে বলে বলা হয়েছিলো।
খাত হিসেবে ফ্রিল্যার্ন্সিংকে বেশ গুরুত্বও দিয়ে আসছে সরকার। ২০ হাজার নারীসহ ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরিতে দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ১০ হাজার বিশেষায়িত আউটসোর্সিং ফ্রিল্যান্সার তৈরির এডভান্স প্রশিক্ষণের উদ্যোগও হয়েছে। এছাড়া নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তর।
সূত্র: টেকশহর ডককম
বিষয়: ফ্রিল্যান্সার প্রণোদনা

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: