সোশ্যাল মিডিয়ায় উপহারের প্রলোভন, থাকতে হবে সতর্ক
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২১ ০৩:৪২; আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৬
 
                                সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উপহারের নামে একটা প্রতিষ্ঠানের নামে অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ-এ একটা মেসেজ পেয়েছেন। লিংকটা ক্লিক করলে লেখা আসছে, নারী দিবস উপলক্ষে ১০০-এর বেশি উপহার রয়েছে। তার মধ্যে কম্পিউটার ও মোবাইলফোন আরো বিভিন্ন কিছু।
যারা এই বার্তাটি পেয়েছেন তাদের মধ্যে একজন উম্মে হাবিবা। তিনি বলেছেন, ‘তার কাছে একটা এসএমএস আসে। সেখানে একটা লিংক ও অনেকগুলো বক্স ছিল। তিনটা বক্সে ক্লিক করার অপশন ছিল। আমি দুইটা বক্সে ক্লিক করার পর খালি আসে। তখন আমি ভীষণ উত্তেজনা বোধ করছিলাম। তিন নম্বর বক্সে ক্লিক করার পর আইফোন ১২ প্রো ম্যাক্স পেয়েছি সেটা দেখিয়ে অভিনন্দন দেয়। এর পর লেখা আসে ওই একই লিংক আরো ২০ জনকে হোয়াটসঅ্যাপ করতে হবে কিংবা সেটা পাঁচটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি এতটাই প্রলুব্ধ হয়ে যাই যে হোয়াটসঅ্যাপে ২০ জনকে লিংকটা ফরোয়ার্ড করি। পরে আমার কাছে মেসেজ আসে তাদের পাঠানো একটা অ্যাপ ইন্সটল করতে হবে আমার মোবাইল থেকে এবং ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। অ্যাপটি আমি ইন্সটল করিনি। কিন্তু ভয় পাচ্ছি এটা উপহারের প্রলোভনের কোনো ফাঁদ কি-না।’
অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এমন উপহারের প্রলোভন দেখিয়া বিভিন্ন সময়ে মোবাইল, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, হোয়াটসঅ্যাপ বা ই-মেইলে বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদে বার্তা আসে। সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা এই বার্তা বা লিংক থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
কারা পাঠায় লিংক
সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃতীয় একটা পক্ষ এই লিংক বা বার্তা পাঠিয়ে থাকে। যে ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের নামে লিংকগুলো আসে তারা এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত থাকে না। এই তৃতীয় পক্ষ ওইসব নামকরা প্রতিষ্ঠানের সুনাম, খ্যাতি ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে।
সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলেন, ‘এটা এক ধরনের স্ক্যাম বা প্রতারণা। একটা ফিশিং লিংক ব্যবহার করে তারা এই প্রতারণাটা করে। এতে করে একজনের ব্যক্তিগত তথ্য চলে যায় থার্ড পার্টির কাছে।’
থার্ড পার্টির লাভ কী?
আপাতদৃষ্টিতে তাদের দুইটি লাভের দিক দেখা যায়। জেনিফার আলম বলছেন, দু’ভাবে তারা লাভবান হতে পারেন।
১) যদি তারা কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাহলে তারা সরাসরি এই ফিশিং লিংক তাকে পাঠাবে বা তার আশপাশের মানুষকে পাঠাবে যাতে করে টার্গেট করা ব্যক্তি পর্যন্ত এই লিংক পৌঁছাতে পারে। এই ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহটাই লক্ষ্য থাকে থার্ড পার্টির।
২) সর্বসাধারণের কাছে তারা এটা পাঠায়। এখানে কিছু মজার খেলা তারা সেট করে। যেমন একটা ধাপ পার করে আপনি পরের ধাপে যাবেন। সেখানে হয়ত দেখা যাবে আপনাকে বলবে আপনি একটা মোবাইল ফোন বা কোনো ডিভাইস জিতেছেন। ওই ডিভাইসটির দাম এক লাখ টাকা। তবে তারা (থার্ড পার্টি) আপনাকে অর্ধেক দামে দিতে পারবে। এই সময়ে অনেকে প্রলোভনে পড়ে টাকা দিয়ে দিতে পারে। আর থার্ড পার্টি সেই টাকাটা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাবে।
যেভাবে সর্তক থাকতে হবে
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপহারের প্রলোভন দেখিয়ে যেসব বার্তা বা ই-মেইল আসে সেসব থেকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে যখন কোনো নামী প্রতিষ্ঠানের নামে এসব লিংক আসে।
১. এই লিংক গুলোতে ক্লিক না করা।
২. সোশ্যাল মিডিয়াতে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো ভেরিফাইড পেজ থাকলে সেখানে ওই সংক্রান্ত কোনো পোস্ট আছে কি-না সেটা আগে দেখতে হবে।
৩. কোম্পানিটির হটলাইন থাকলে সেখানে ফোন করে জেনে নিতে হবে।
সম্প্রতি উইমেনস ডে উপলক্ষে যে লিংকটা ভাইরাল হয়েছে। এ সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহেল রানা জানিয়েছেন তিনি লিংকটি সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে পাঠিয়েছেন। তারা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছেন।
সূত্র : বিবিসি অবলমম্বনে নয়া দিগন্ত
বিষয়: ফেসবুক

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: