ঢাবিতে রমজানের আলোচনা সভায় হামলাকারী কারা?

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৭; আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ২০:০১

ছবি: সংগৃহীত

গত ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীর উদ্যোগে আয়োজিত ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শীর্ষক রমজানের আলোচনা সভায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। রমজানের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভায় এমন হামলায় দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

তখন এ হামলায় নাম উঠে আসে শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহিদুল ইসলাম সুজনের নাম। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য মতে সুজনের নেতৃত্বেই শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় ২০-২৫ জনের একটি দল।

তবে ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য, ভুক্তভোগীদের ভাষ্য এবং ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হামলার নেতৃত্বে বহিরাগত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী থাকলেও বেশীরভাগ হামলাকারীই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। এবং এরা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।

জানান যায়, শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহিদুল ইসলাম সুজনকে নেতৃত্বে দিয়ে তার সাথে নিজের অনুসারীদের রেখে হামলার মূল পরিকল্পনা করে সৈকত। আর এভাবেই হামলা করা হয়। মূলত নিজেকে আড়াল করতে গুটি কয়েক বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে এ হামলা চালানো হয়।

এছাড়া, হামলা পরবর্তী সময়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত গণমাধ্যমে বলেন, ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় যারা ছিলেন তারা ইসলামি ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত এবং তারা সেখানে রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতা চালানোর উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছেন। ফলে ধর্মপ্রাণ সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের এ অপতৎপরতা রুখে দেয়।

কিন্তু তানভীর হাসান সৈকত উল্লেখ করা ‘ধর্মপ্রাণ সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ সবাই শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও রাজনীতিতে তার অনুসারী বলে জানা গেছে। ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ধারণা করছেন, সৈকতের নির্দেশেই এ হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িত থাকা ঢাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলেন— শহিদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত ইসলাম প্লাবন, জসিম উদ্দিন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ সুলতান অপু, সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র ও ঢাবি ছাত্রলীগের উপ দফতর সম্পাদক নাইমুর রহমান, ঢাবি ছাত্রলীগের উপ মানব সম্পাদক মুশফিকুর রহমান।

এছাড়া অন্যান্যরা হলেন— ঢাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম রিসাল, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন উপ-সম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, জসিম হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাশেদুজ্জামান রনি, জসিম হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম খান, ঢাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আক্তারুল করিম রুবেল এবং শহিদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের পাঠাগার উপ সম্পাদক খালিদ হাসন নিলয়।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র ও ঢাবি ছাত্রলীগের উপ দফতর সম্পাদক নাইমুর রহমান বলেন, আমি ওখানে ছিলাম না। ওখানে কেন; ক্যাম্পাসের কোন ঝামেলার সাথেই আমি জড়িত নই।

হামলার সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জসিম হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাশেদুজ্জামান রনি বলেন, আমার একটা ছবি নিয়ে ওখানে ফুটেজের সাথে কে বা কারা বসাইছে। তারা কিন্তু কোন ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেনি যে আমি ওখানে ছিলাম। শুধু ছবি লাগিয়ে বলছে আমি ওখানে ছিলাম না।

হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও ঘটনাস্থলে থাকার কথা স্বীকার করেন তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ সুলতান অপু। তিনি বলেন, আমার অসুস্থতার জন্য ঢাবি মেডিকেলে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে সেখান থেকে আসার পথে হট্টগোল দেখে আমি বাইক দাঁড় করিয়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়াই। এছাড়া আমি কিছুই করিনি।

চিকিৎসা নেওয়ার কোনো প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুধু নাম এন্ট্রি করে চলে আসছি। ডাক্তার মৌখিকভাবে কিছু ওষুধ খেতে বলে দিয়েছে।

তবে জানা যায়, ঢাবি মেডিকেলে মৌখিকভাবে প্রেসক্রিপশন দেওয়ার কোনো নজির নেই।

এ বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top